লাইফ স্টাইল

ডায়াবেটিস ও হার্টের সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করে জাম

গরমে জনপ্রিয় ফলের মধ্যে একটি জাম। স্বাস্থ্যের বেশকিছু উপকারিতার জন্য এই ফল বিশেষ সমাদৃত। তাই জাম খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। বিশেষ করে যাদের ডায়াবেটিস ও হার্টের সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য জাম মহৌষধ। তাই বলা চলে, ডায়াবেটিস ও হার্টের সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করে জাম!

 

এই গরমে জাম খেলে নানা রোগ থেকে নিস্তার মিলবে। সেই সঙ্গে সারা বছরের পুষ্টির চাহিদাও মিটবে। রক্তের টক্সিন দূর করা থেকে শুরু করে হাড় মজবুত করা- সব জায়গায়ই জাম সেরা। আয়রন, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম এবং ভিটামিন সি সমৃদ্ধ জাম হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে। জামের নানাবিধ স্বাস্থ্যগুণ সম্পর্কে চলুন জেনে নিই-

 

ডায়াবেটিস মোকাবিলায় অব্যর্থ

জাম ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুব ভালো। এই ফল রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এতে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম। ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন সি, থিয়ামিন, রাইবোফ্লাভিন সমৃদ্ধ জাম খেলে পেট ভালো থাকে। দাঁত আর মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও জাম অপরিহার্য।

ক্যানসার প্রতিরোধ করে

জাম মুখের ভেতর উৎপাদিত ক্যানসারের সহায়ক ব্যাকটেরিয়ার প্রভাব থেকে দেহকে রক্ষা করে মুখের ক্যানসার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। রঙিন ফলের ভেতর যে পরিমাণ যৌগিক উপাদান রয়েছে, এর মধ্যে জামে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ যৌগিক উপাদান রয়েছে, যা স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সাহায্য করে। জাম লড়াই করে জরায়ু, ডিম্বাশয় ও মলদ্বারের ক্যানসারের বিরুদ্ধেও।

মানসিকভাবে সতেজ রাখে

জামে গ্লুকোজ, ডেক্সট্রোজ ও ফ্রুকটোজ রয়েছে, যা মানুষকে জোগায় কাজ করার শক্তি। বয়স যত বাড়তে থাকে, মানুষ ততই হারাতে থাকে স্মৃতিশক্তি। জাম স্মৃতিশক্তি প্রখর রাখতে সাহায্য করে।

ভিটামিন সি-এর অভাবজনিত রোগ দূর করে

জামে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি। ফলে জাম খেলে ভিটামিন সি-এর অভাবজনিত রোগ দূর হয়। এছাড়া মুখের দুর্গন্ধ রোধ, দাঁত মজবুত, মাঢ়ি শক্ত এবং মাঢ়ির ক্ষয়রোধেও জামের জুড়ি নেই । এতে বিদ্যমান পানি, লবণ ও পটাসিয়ামের মতো উপাদান গরমে শরীর ঠান্ডা এবং শারীরিক দুর্বলতাকে দূর করতে সক্ষম। জামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ আয়রন, যা রক্তস্বল্পতা দূর করে।

হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি করে

জাম ক্যালসিয়াম, লোহা, পটাসিয়াম এবং ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ। এতে প্রচুর পুষ্টি রয়েছে, যা সুস্বাস্থ্যের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। জামে থাকা প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম ও লৌহ হাড়ের শক্তি বৃদ্ধির জন্য চমৎকার কাজ করে। তাই হাড় ক্ষয়ে যাওয়া রোগীদের এবং বয়স্ক মানুষদের খাবার তালিকায় জাম রাখা উচিত।

হার্টের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে

জামে আছে অ্যালজিনিক এসিড বা অ্যালজিট্রিন, অ্যান্থোসিয়ানিন এবং অ্যান্থোসায়ানাডিনস এর মতো পুষ্টি, যা রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে এবং এই যৌগগুলো শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস-সমৃদ্ধ, যা অক্সিডেশন প্রতিরোধ করে এবং হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ভালো রাখতে অসামান্য অবদান রাখে। এছাড়া এটি পটাসিয়ামের একটি সমৃদ্ধ ভাণ্ডার, যা উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে সাহায্য করে, যা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি, স্ট্রোক প্রভৃতির ঝুঁকির কারণ।

ওজন নিয়ন্ত্রণে কার্যকর

জামে কম পরিমাণে ক্যালোরি থাকে, যা ক্ষতিকর তো নয়ই বরং স্বাস্থ্যসম্মত। তাই যারা ওজন নিয়ে চিন্তায় আছেন এবং নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন, তারা খাদ্য তালিকায় জাম রাখতে পারেন।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

জামে ফাইটো কেমিক্যালস আর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট বিদ্যমান। দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, সঙ্গে মৌসুমি সর্দি-কাশি থেকে মুক্তি দেয়। প্রতিরোধ করে ইনফেকশনের মতো সমস্যারও। জামে পাওয়া গেছে অ্যালার্জিক নামে এক ধরনের এসিডের উপস্থিতি, যা ত্বককে করে শক্তিশালী। ক্ষতিকর আলট্রা-ভায়োলেট রশ্মির প্রভাব থেকে ত্বক ও চুলকে রক্ষা করে। এ অ্যালার্জিক এসিড ক্ষতিকর ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।

চোখের সমস্যা দূর করে

বৃদ্ধ বয়সে চোখের অঙ্গ ও স্নায়ুগুলোকে কর্মময় করতে সাহায্য করে। জাম চোখের ইনফেকশনজনিত সমস্যা ও সংক্রামক (ছোঁয়াচে) রোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।রাতকানা রোগ এবং যাদের চোখের ছানি অপারেশন হয়েছে তাদের জন্য জাম ভীষণ উপকারী। আমাদের নাক, কান, মুখের ছিদ্র, চোখের কোনা দিয়ে বাতাসে ভাসমান রোগজীবাণু দেহের ভেতর প্রবেশ করে। জামের রস এ জীবাণুকে মেরে ফেলে।