ধর্ম

এবার কুরবানি হোক শুধু আল্লাহর জন্য

কোরবানি আরবি শব্দ। এর অর্থ নৈকট্য অর্জন করা। আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে, তারই নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে, হিজরি মাসের দশই জিলহজ ঈদুল আজহার দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায়ের পর হালাল চতুষ্পদ গৃহপালিত পশু জবাই করাই হলো কোরবানি। যা একটি ওয়াজিব আমল। দশই জিলহজ থেকে বারোই জিলহজ পর্যন্ত যে ব্যক্তির ওপর সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব হয়, এমন অর্থ-সম্পদের মালিক এবং যে ব্যক্তি তার নিজ বাসস্থানে রয়েছেন (মুসাফির নন), এমন ব্যক্তির ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আপনি আপনার প্রভুর জন্য নামাজ আদায় ও কোরবানি করুন।’ (সুরা কাউসার ০২) এ ইবাদতটি একমাত্র মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হওয়া চাই। এ বিষয়ে লক্ষ রাখা জরুরি যে, আমাদের কোরবানি যেন লোক দেখানো বা গোশত খাওয়ার জন্য না হয়। অনেকে মাসআলা না জেনে, না বুঝে অন্যের দেখাদেখি কোরবানির নিয়ত করেন। কেউ বা লোকলজ্জার ভয়ে কোরবানিতে শরিক হোন। কখনো এমনটা হওয়া উচিত নয়। এ জন্য শুরুতেই আমাদের নিয়ত বিশুদ্ধ করা জরুরি।

কোনো বিজ্ঞ আলেম থেকে এ বিষয়ে যাবতীয় মাসয়ালা জেনে নেওয়া উচিত। যেন সামান্য একটু ভুলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল নষ্ট না হয়ে যায়। এমনকি কোরবানির জন্য ব্যয়কৃত অর্থও হালাল হওয়া জরুরি। আর কোরবানি হবেই একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য অর্জনের জন্য। বান্দার যাবতীয় আমল ও ইবাদতও এক আল্লাহর জন্য হওয়া উচিত। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আপনি বলুন, আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন এবং আমার মৃত্যু বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য।’ (সুরা আনআম ১৬২)

আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘আল্লাহর নিকটে কোরবানির পশুর রক্ত-মাংসের কিছুই পৌঁছে না। পৌঁছে কেবল তোমাদের তাকওয়া।’ (সুরা হজ ৩৭) যার অন্তরে তাকওয়া তথা আল্লাহর ভয় যত বেশি হবে তার ইবাদত ও আমল তত বেশি আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য ও পছন্দনীয় হবে।কোরবানি হজরত ইবরাহিম (আ.) এবং তার শিশুপুত্র হজরত ইসমাঈল (আ.)-এর স্মৃতিবিজড়িত একটি আমল। যা অতুলনীয় এক দৃষ্টান্ত হিসেবে আজও এই উম্মতের মাঝে বাস্তবায়িত হয়ে আসছে। কোরআনের ভাষায়, ‘অতঃপর সে যখন তার পিতার সঙ্গে চলাফেরার বয়সে উপনীত হলো, তখন ইবরাহিম তাকে বলল, হে আমার পুত্র! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, তোমাকে যবাই করছি। এখন তোমার কী মতামত বলো? সে বলল, হে পিতা!

আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, আপনি তা পালন করুন। ইনশাআল্লাহ, আপনি আমাকে ধৈর্যশীল হিসাবেই পাবেন।’ (সুরা সাফফাত ১০২) তাফসিরে আহসানুল বয়ানে এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে, ইসমাইল (আ.) যখন চলাফেরা করার মতো বা সাবালক হওয়ার নিকটবর্তী হলেন তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে এ আদেশ করা হয়। নবিদের স্বপ্ন আল্লাহর আদেশেই হয়ে থাকে। ফলে তাদের জন্য তা পালন করা জরুরি। পুত্র আল্লাহর আদেশ পালনে কতটা প্রস্তুত আছেন, তা জানার উদ্দেশে তিনি পুত্রের সঙ্গে এ বিষয়ে পরামর্শ করেন। আর পুত্রও অনুগত হয়ে জবাব দেয়, আপনি আমাকে ধৈর্যশীল হিসেবেই পাবেন।

আর এটি এমন এক হৃদয়বিদারক আখ্যান ছিল, যা পিতা-পুত্রের জন্য ছিল এক ইমানি পরীক্ষা। যে পরীক্ষায় তারা সফল ও উত্তীর্ণ হয়েছেন। আল্লাহ তাদের এ পরীক্ষাকে কবুল করেছেন এবং পরবর্তী উম্মাতের জন্য এ আমলটিকে ইবরাহিমি সুন্নাহ হিসেবে মনোনীত করেছেন।মুসতাদরাকে হাকিমে বর্ণিত হয়েছে, সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! কোরবানির রহস্য কী? তিনি বললেন, এটি তোমাদের পিতামহ হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর সুন্নত। সাহাবারা (রা.) জিজ্ঞেস করলেন, এর বিনিময়ে আমরা কী পাব? রাসুল (সা.) বললেন, তোমরা কোরবানিকৃত পশুর প্রত্যেকটি পশমের বিনিময়ে এক একটি করে নেকি পাবে। আল্লাহতায়ালা আমাদের সামর্থ্যবান প্রত্যেককে তার সন্তুষ্টি অর্জন ও ভালোবাসা লাভের নিমিত্তে সঠিকভাবে সঠিক নিয়মে কোরবানি করার তাওফিক দান করুন।

%d bloggers like this: