ভিন্ন স্বাদের খবর

যেভাবে বাঁচলো যাত্রীর প্রাণ চালকের কিডনিতে

আমেরিকার নিউজার্সির বাসিন্দা ৭১ বছর বয়সী বিল সুমিয়েল ভিনল্যান্ডের ভাস্কুলার ইনস্টিটিউটে কিডনি ডায়ালাইসিস কেবলই শেষ করেছেন। অপেক্ষা করছেন বাসায় ফেরার। বাসায় ফিরতে উবার কল করেন। উবার চালক টিমোথি লেটস (৩১) সুমিয়েলের কল যখন পান, তখন ট্রিপটি তার রুটের বাইরে ছিল।

তারপরেও ট্রিপটি নিতে রাজি হয়ে যান। লেটস ভাবছিলেন, উবারের সেই যাত্রীর নিশ্চয়ই জরুরি কোনো মেডিকেল সাহায্য প্রয়োজন। নিউজার্সির সুমিয়েল যখন গাড়িতে উঠেন, চালক লক্ষ করেন, তিনি বেশ ক্লান্ত কিন্তু প্রাণবন্ত ছিলেন।গন্তব্যে যেতে সুমিয়েলের লাগবে ৪০ মিনিট। স্বল্প দূরত্বের এই যাত্রায় গল্প শুরু করেন দুজনেই। শুরুটা করেন লেটস নিজেই।

নিজেদের আলাপচারিতায় জানান, তিনি একজন গর্বিত সেনা। এদিকে যাত্রী বিল সুমিয়েল, পাইপ প্রস্তুকারক কোম্পানিতে বিপণন বিভাগে কাজ করেন। গর্ব করে লেটসকে বলেন, অতীতে তিনি তার গির্জায় এবং নিজ সম্প্রদায়ে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করা উপভোগ করতেন। এমনকি সিটি কাউন্সিলের সভাপতি হিসেবেও কাজ করেছেন। কিন্তু তিনি এখন এসব কাজ কমিয়ে দিয়েছেন !

কারণ হিসেবে জানালেন, দীর্ঘ ২০ বছর যাবত ডায়বেটিসে ভুগছেন তিনি। নিয়মিত ডায়ালাইসিসও করাতে হয়। সে জন্যই তাকে ক্লান্ত দেখাচ্ছে। চলার পথে প্রবীণ এই ব্যক্তি নিজের আবেগ লুকাতে পারেন নি। লেটসকে বলেন, তিনি একজন কিডনি ডোনারের সন্ধান করছেন। লেটস রসিকতা করে পাল্টা জবাব দেন, ‘ আমি একজন ভালো ডোনার হবো।

কেননা, আমি মদ্যপান বা ধূমপান করি না।গাড়িতে বিষয়টি নিয়ে খুব একটা আর ভাবেন নি সুমিয়েল। তবে উবার চালক লেটস এই সম্পর্কে চিন্তা করা থামান নি। কেননা তিনি অন্যদের সাহায্য করায় বিশ্বাস করতেন। সেজন্য কিডনি দান করার বিষয়টি তখনও গুরুত্বের সাথে নিয়েছিলেন। যাত্রী সুমিয়েলের বাড়ি পৌছার আগেই লেটস সুমিয়েলকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘ দেখতে চাই, আমি আপনাকে একটি কিডনি দেওয়ার মতো একজন হতে পারি কিনা।’

‘আমি হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম, সুমিয়েল হাসতে হাসতে বলছিলেন। আমি এত জোরে কাঁপছিলাম যে তথ্য আদান-প্রদান করার সময় তার নাম লিখতে পারিনি। বাড়িতে ফিরে সুমিয়েল তার স্ত্রীকে বলেছিলেন, ‘উবার ড্রাইভার আমাকে তার কিডনি দিতে চেয়েছে’ !প্রাথমিকভাবে বেশ আশাবাদী হলেও পরে সুমিয়েল কিছুটা হতাশা হয়ে পড়েন। তিনি ভেবেছিলেন, এটি ছিল কেবলই একটি আবেগঘন মুহূর্ত ! লেটসের কাছ থেকে আর কখনো শুনতে পাবেন কিনা ? তাদের কিডনি কি একই রকম হওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা?

এসব চিন্তা মাথায় আসছিল সুমিয়েলের। কিন্তু লেটস তার দেয়া আশ্বাসে অটল ছিলেন। মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরে সুমিয়েলের সাথে যোগাযোগ করেন এবং পরের সপ্তাহে কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট প্রোগ্রামের সাথে যোগাযোগ করেন। এক মাসব্যাপী স্ক্রীনিং প্রক্রিয়ার পর একটি ইন্টারভিউ, মেডিকেল রেকর্ড শেয়ার করা এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফলে জানা যায় লেটস একজন আদর্শ ডোনার।৭ই ডিসেম্বর, ২০২১ তারিখে সুমিয়েল এবং লেটসের অস্ত্রোপচার সফল হয়। সুমিয়েল সুস্থ হন পুরোপুরি। এখন পুরো সময় কাজ করেন।

নিজ পরিবারের সাথে সময় উপভোগ করছেন। নেই কোনো ডায়ালাইসিসের ঝামেলা! অন্যদিকে মানবিক লেটস বর্তমানে জার্মানিতে আছেন। সেখানে একজন বেসামরিক ব্যক্তি হিসেবে সেনাবাহিনীতে কাজ করেন। দুজনেই পরস্পরের সাথে যোগাযোগ রাখছেন যেন আবার কোনো একদিন দেখা করতে পারেন ।লেটসের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাতে গিয়ে সুমিয়েল বলেন, ‘জীবিত ডোনাররা সত্যিই বিশেষ মানুষ!

%d bloggers like this: