7 September 2023 , 2:47:50 প্রিন্ট সংস্করণ
বাংলাদেশে ডেঙ্গুর টিকা প্রয়োগ নিয়ে চলছে আলোচনা। বিশ্বের কয়েকটি দেশে টিকা প্রয়োগ শুরু হলেও এর কার্যকর ফলের দিকে তাকিয়ে বাংলাদেশ। অপেক্ষায় আছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশেরও। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ মুহূর্তে টিকাকে গুরুত্ব না দিয়ে জোর দিতে হবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে। এ ছাড়া বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চালিয়ে যেতে হবে গবেষণাও।
অতিমারি করোনার ভয়াবহতা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে গোটা বিশ্ব। এক্ষেত্রে শুরুতে ছিল না কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা গাইডলাইন। সব মহলে প্রতি মুহূর্তে কেটেছে শঙ্কা আর অনিশ্চয়তায়।নানা জল্পনা-কল্পনা আর আলাপ-আলোচনার পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রথমে শুরু হয় টিকা আবিষ্কার; এরপর প্রয়োগ। বাদ যায়নি বাংলাদেশও; ফলে স্বস্তি আসে জনমনে।
অজানা এ ভাইরাসের লাগাম টেনে ধরতে টিকার ভূমিকা কতটুকু- এ নিয়ে তর্ক থাকলেও বিশেষজ্ঞদের মত টিকাতে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ এসেছে করোনাভাইরাস।এডিস মশার দৌরাত্ম্যে নানা সময় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাজার হাজার মানুষ ভোগান্তি পোহালেও গত ১০০ বছর ধরে এখনও গবেষণার টেবিলে এর টিকা।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সনোফি এবং লুই পাস্তর ইনস্টিটিউটের ডেংভাক্সিয়া নটিকার শর্ত সাপেক্ষে অনুমোদন দেয়া হলেও তা নিয়েও রয়েছে বিতর্ক। যদিও এরই মধ্যে প্রয়োগ শুরু হয়েছে ফিলিপাইন, পুয়ের্তোরিকো ও সিঙ্গাপুরে।গত দুই দশক ধরে বাংলাদেশেও চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গু। ২০১৯ সালের পর আবারও অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৩৬৪ জন (১০ আগস্ট পর্যন্ত)। এ অবস্থায় টিকা নিয়ে কী ভাবছে দেশের স্বাস্থ্য বিভাগ?
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক ডা. শাহাদাত হোসেনের কথায় উঠে এলো এর কার্যকারিতার প্রশ্ন। তিনি বলেন, ‘কিছু দেশ এটির অনুমতি পেয়েছে। আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমতি দিলে আমরা শুরু করি। তবে এর কার্যকারিতা নিয়ে এখনও নানা মহলে আলোচনা চলছে। কিন্তু আমাদের দেশে এটি কার্যকরী হলে আমরা ব্যবহার করব।
এখন আলোচনা-পর্যালোচনা চলছে।তবে চলমান ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে টিকা নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে বিশেষজ্ঞদের মত, গুরুত্ব দিতে হবে এডিসের লার্ভা ধ্বংসের অর্থাৎ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিতে।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান খসরু বলেন, ডেঙ্গু মোকাবিলার জন্য ভ্যাকসিন একটি সহায়ক হতে পারে।
কিন্তু এখন যে অবস্থা, তাতে রোগীর স্রোত বাড়ছে, মৃত্যু বাড়ছে। এরজন্য তো ভ্যাকসিন আলোচনার বিষয় না। রোগীর স্রোত আগে থামাতে হবে।একই সাথে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে ডেঙ্গুর ভ্যাকসিনেশন পদ্ধতির যেকোনো একটি ট্রায়ালে যুক্ত হওয়ার পরামর্শও দেন এ গবেষক। তিনি বলেন, ডেঙ্গু মোকাবিলায় স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি আলাদা আলাদা পরিকল্পনা নিয়ে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার আরও ১২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মোট মারা গেছেন ৩৬৪ জন। এ ছাড়া সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় চলতি বছরে একদিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক ২ হাজার ৯৫৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারা দেশে ৭৮ হাজার ২৮ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় ৩৯ হাজার ৯১১ জন এবং ঢাকার বাইরে চিকিৎসা নিয়েছেন ৩৮ হাজার ১৭৭ জন।