31 January 2024 , 2:28:57 প্রিন্ট সংস্করণ
করোনা মহামারি ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে শুরু হয়ে এখনো পর্যন্ত চলছে। প্রাদুর্ভাবের পর থেকে রোগটিকে জরুরি জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখা হচ্ছিলো। তিন বছর পর ২০২৩ সালের মে মাসে, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ঘোষণা করে রোগটি জনস্বাস্থ্য সমস্যা নয়। দুর্ভাগ্যবশত ২০২৩ সালের জুলাই মাস থেকে এর প্রাদুর্ভাব বাড়তে থাকে।
বিশ্বব্যাপী এ যাবৎ ৭৭ কোটি ৫০ লাখেরও বেশি মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে এবং ৭০ লাখেরও বেশি মানুষ এতে মৃত্যুবরণ করেছে।২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে এই রোগ নতুন করে সব মহাদেশে আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। রোগাক্রান্ত নতুন রোগীর সংখ্যা বেড়েছে চার থেকে ১০ শতাংশ। আক্রান্তদের মধ্যে খুব অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ এবং আইসিইউতে ভর্তি বৃদ্ধি পেয়েছে ১৩ শতাংশ।
গুরুতর অসুস্থদের মধ্যে মৃত্যুহার বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ২৬ শতাংশ।করোনাভাইরাসের সব ভেরিয়েন্টের উৎপত্তি ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট থেকে। ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট (বি-১.১.৫২৯) প্রথম শনাক্ত হয় আফ্রিকা মহাদেশে ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে। এই ভেরিয়েন্টের প্রাথমিক উপধরন হচ্ছে বিএ.১।ভাইরাসের মিউটেশন বৃদ্ধির কারণে উপধরনগুলো বদলাতে থাকে।
বর্তমানের উপধরন হচ্ছে বিএ-২.৮৬। করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রধানত জেএন-১ ভেরিয়েন্টজনিত, এটা ওমিক্রন ভেরিয়েন্টের উপধরন বিএ-২.৮৬-এর সঙ্গে সম্পর্কিত। জেএন-১ প্রথম শনাক্ত হয় ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে ইসরায়েলে। ৭১টি দেশে এই ভেরিয়েন্ট শনাক্ত করা হয়েছে।চলমান করোনাভাইরাসের প্রায় ৫০ শতাংশই জেএন-১ ভেরিয়েন্ট।
এর পর আসে ভেরিয়েন্ট এইচভি-১, তারপর ভেরিয়েন্ট জেডি-১.১। জেএন-১ ভেরিয়েন্টের সংক্রমণক্ষমতা অন্যান্য ভেরিয়েন্টের তুলনায় বেশি, তাই কোভিড দ্রুত ছড়াচ্ছে। জেএন-১-জনিত রোগের উপসর্গ ওমিক্রনজনিত উপসর্গের মতোই। যাদের ফুসফুসের অসুখ আছে, যারা ক্যান্সারের চিকিৎসাপ্রাপ্ত হচ্ছে এবং বয়স্কদের জন্য এই অসুখ গুরুতর হচ্ছে।
কোভিডের সাম্প্রতিক ভ্যাকসিন, যেটা ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দেয়া শুরু হয়েছে, সেটা জেএন-১ জনিত অসুখের সুরক্ষা দিতে সক্ষম, এটা গ্রহণকারী ব্যক্তিদের অসুখ গুরুতর পর্যায়ে যেতে পারে না। তবে, এই ভ্যাকসিন এ যাবৎ শুধু ২০ শতাংশ মানুষ গ্রহণ করেছে। তাই যারা ২০২৩ সালে নতুন কভিড ভ্যাকসিনপ্রাপ্ত হয়নি, তাদের সবাইকে, বিশেষ করে যাদের অসুখ গুরুতর হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, দ্রুত এই ভ্যাকসিন দিয়ে দেয়া প্রয়োজন।
করোনাভাইরাস দমনে যেসব ওষুধ এ যাবৎ ব্যবহৃত হয়ে আসছে সেগুলো বর্তমান ভেরিয়েন্টজনিত অসুখের চিকিৎসায়ও কার্যকর।অসুখের উপসর্গ, যেমন- মাথা ব্যথা, গলাব্যথা, ডায়রিয়া, জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রোগ নির্ণয় করা প্রয়োজন, যাতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসার আওতায় আনা যায়। কভিড ও অন্যান্য ভাইরাস, যেগুলো ফুসফুসের রোগ ছড়ায়, সেগুলোর সংক্রমণ শীত মৌসুমে অনেক গুণ বৃদ্ধি পায়। তাই ইনফ্লুয়েঞ্জা ও আরএসভি ভ্যাকসিন নিয়ে নেয়া প্রয়োজন।
করোনাভাইরাসের যেকোনো ভেরিয়েন্টজনিত সংক্রমণ প্রতিহত করতে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ আগের মতোই রয়েছে। যেমন- মাস্ক ব্যবহার, হাত ধোয়া, ভ্যাকসিন নেয়া, উপসর্গ দেখা দিলে রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা করা ও চিকিৎসা নেয়া এবং অসুস্থ হলে ঘরে থাকা।করোনাভাইরাসের প্রজনন যত বৃদ্ধি পাবে, এর ভেরিয়েন্টের সংখ্যাও তত বাড়বে।
ভাইরাসে নতুন নতুন মিউটেশন হবে, তাতে সংক্রমণ বাড়বে। তখন সুরক্ষা পেতে নতুন ভ্যাকসিনের প্রয়োজন হবে। গত চার বছরে এই ভাইরাস মানুষ ও বিভিন্ন পশুর মধ্যে ছড়িয়েছে। নতুন ভেরিয়েন্টে অনেক নতুন মিউটেশন হওয়ার ফলে এগুলো বেশি সংক্রামক হয়ে উঠছে। এই ভাইরাস সম্পূর্ণ নির্মূল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম বলে মনে হচ্ছে।
করোনা প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজন ভ্যাকসিন এবং ব্যক্তিগত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ। ব্যক্তিগত ও সমগ্র দেশের জনগণের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সম্মিলন গুরুতর রোগ দমন করতে সক্ষম হবে।