জাতীয়

বাংলাদেশ চাইলেই শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাবে না ভারত

বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ড. ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই সরকারে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি নেই। কিন্তু এতদিন সরকার-বিরোধী অবস্থানে থাকা বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীর মতো রাজনৈতিক দলগুলি এ অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন করছে।

দেশত্যাগী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন ভারতে। প্রশ্ন উঠেছে- বাংলাদেশ সরকার প্রত্যর্পণের আর্জি জানালে ভারত কি শেখ হাসিনাকে ঢাকার হাতে তুলে দেবে? বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এখনো সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে প্রত্যর্পণের কথা দিল্লিকে বলা হয়নি। কিন্তু আগের সরকারের সব কর্তাব্যক্তির কূটনৈতিক পাসপোর্ট (লাল পাসপোর্ট) বাতিল করায় হাসিনাও সেই রক্ষাকবচ হারাচ্ছেন।

সঙ্গে তার বিরুদ্ধে প্রতিদিন একের পর এক মামলা করা হচ্ছে, যার অধিকাংশই হত্যা ও গণহত্যার মতো গুরুতর অভিযোগে করা। এই পরিস্থিতিতে হাসিনাকে প্রত্যর্পণের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগির। তিনি বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ২০১৩ সালে প্রত্যর্পণ চুক্তি হওয়ায় হাসিনাকে ভারত ঢাকার হাতে তুলে দিতে বাধ্য। ফখরুল জানিয়েছেন, প্রত্যর্পণের পরে খুনের আসামি হিসাবে হাসিনার বিচার করা হবে ঢাকার আদালতে।তবে সরকারের কোনো পদে ফখরুল নেই।

তাই হাসিনাকে ফেরত দেওয়ার বিষয়ে তার কথার জবাব ভারত সরকার দেয়নি। কিন্তু জবাব না দিলেও দিল্লিতে হাসিনার অবস্থান যে বাংলাদেশে ভারত-বিরোধিতা বাড়াবে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিলক্ষণ তা বোঝে। এ জন্য তৃতীয় কোনো দেশে হাসিনাকে নিরাপদে রাখার একটা তোড়জোড়ও দিল্লি চালাচ্ছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগির হাসিনাকে ফেরত চাইলেও বিএনপি নেতৃত্বের মধ্যে এই দাবির বিষয়ে এখনো কোনো সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত হয়নি। বিএনপি নেতৃত্বের একাংশ মনে করেন, হাসিনার প্রত্যর্পণের মতো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়ার কথাই নয়।

অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ আইনশৃঙ্খলায় রাশ টেনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসার পরে হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে কাঠগড়ায় তুললে তবে বিএনপি রাজনৈতিক ফায়দাটি পাবে। হাসিনাকে ফেরানোর দাবি নির্বাচনী প্রতি‌শ্রুতি হিসাবেও জনপ্রিয় করা যাবে। মির্জা ফখরুলের দাবি তাই খানিকটা ‘সময়ের আগে তোলা’ বলে মনে করছেন বিএনপি নেতৃত্বের এই অংশ। তবে হাসিনাকে ফেরত দেওয়ার বিষয়ে ২০১৩ সালের প্রত্যর্পণ চুক্তির তেমন কোনো গুরুত্ব রয়েছে বলে মনে করছে না ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

মূলত এই চুক্তি করা হয়েছিল দু’দেশের মধ্যে জঙ্গি, পাচারকারী ও চোরাচালানিদের প্রত্যর্পণের উদ্দেশ্যে। ২০১৬ সালে এই চুক্তিতে বেশ কিছু সংশোধন আনা হয়েছিল। কোনো দেশ যদি মনে করে, রাজনৈতিক কারণে কাউকে প্রত্যর্পণের দাবি জানানো হচ্ছে, তবে তারা দাবি মানতে বাধ্য নয়। এখানে হাসিনার প্রত্যর্পণের দাবি ভারত যদি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপূর্ণ বলে মনে করে, বাংলাদেশের বলার কিছু থাকতে পারে না। আবার চুক্তির আর একটি ধারায় রয়েছে, প্রত্যর্পণের পরে দীর্ঘ কারাবাস ও প্রাণহানির আশঙ্কা থাকলে অন্য পক্ষের দাবি খারিজ করা যাবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারত সরকারের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। ১৯৭৫ সালের ১৫ অগস্ট হাসিনার গোটা পরিবার সেনা অভ্যুত্থানে নিহত হওয়ার পরে ইন্দিরা গান্ধী তাদের দুই বোনকে আশ্রয় দেন। সময়ের ব্যবধানে ফের শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের এই সরকারের হাতে ভারত কখনোই তাদের ছেড়ে দিতে পারে না। তাই তৃতীয় কোনো দেশে তাদের নিরাপদ আশ্রয়ের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।