বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

১২টি দেশে নিষিদ্ধ টিকটক

১২টি দেশে নিষিদ্ধ টিকটক

যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, কানাডাসহ বিশ্বের ১২টি দেশে নিষিদ্ধ হয়েছে চীনা সংস্থা বাইটড্যান্সের মালিকানাধীন অন্যতম জনপ্রিয় শর্ট ভিডিও প্ল্যাটফর্ম টিকটক অ্যাপ। যা বিশ্বব্যাপী তরুণদের মধ্যে ভিডিও তৈরি ও শেয়ার করার ক্ষেত্রে বেশ জনপ্রিয়। তবে অ্যাপটির বিরুদ্ধে অভিযোগ, এটি ব্যবহারকারীদের তথ্য সংগ্রহ করে সেসব তথ্য চীন সরকারের হাতে তুলে দেয়।

যদিও শুরু থেকেই এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে চীনা টেক সংস্থাটি।কিছু কিছু গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে, অ্যাপটি সরকারি ডিভাইসে ডাউনলোড করলে তাদের সংবেদনশীল তথ্য অন্যের হাতে চলে যেতে পারে। অ্যাপ ব্যবহারকারীদের তথ্য কখনোই অন্য কাউকে দেয় না। ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষার ব্যাপারে তারা অন্যান্য সোশাল মিডিয়া কোম্পানির মতো একইভাবে কাজ করে।

বিশ্লেষকরা জানিয়েছে, টিকটক নিষিদ্ধের পেছনে নিরাপত্তা ইস্যুতে সতর্ক থাকার বিষয়টি যেমন আছে, তেমনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের রাজনৈতিক, বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক বিরোধের প্রভাবও এখানে স্পষ্ট। টিকটকের বিরুদ্ধে অভিযোগ যতটা এর নিরাপত্তাকে ঘিরে, তার চেয়ে বড় উদ্বেগের জায়গা এর জন্ম ও উৎস চীনে হওয়া। যে দোষে ইতিমধ্যে দোষী সাব্যস্ত হয়েছে হুয়াওয়েই, জেডটিইসহ অন্য টেক প্রতিষ্ঠানগুলোও।

এখন পর্যন্ত টিকটকের ওপর আংশিক বা সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে এমন দেশ এবং সংস্থাগুলো হলো—

অস্ট্রেলিয়া

৪ই এপ্রিল অস্ট্রেলিয়া নিরাপত্তা উদ্বেগের জন্য সমস্ত ফেডারেল সরকারের মালিকানাধীন ডিভাইস থেকে টিকটক নিষিদ্ধ করেছে।

এস্তোনিয়া

মার্চের শেষের দিকে এস্তোনিয়ার আইটি এবং বৈদেশিক বাণিজ্যের বিদায়ী মন্ত্রী ক্রিস্টজান জারভান একটি স্থানীয় সংবাদপত্রকে বলেছিলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে সরকারের দেওয়া স্মার্টফোন থেকে টিকটক নিষিদ্ধ করা হবে।

যুক্তরাজ্য

১৬ই মার্চ ক্যাবিনেট অফিসে যুক্তরাজ্যের সেক্রেটারি অফ স্টেট অলিভার ডাউডেন ইউকের হাউস অফ কমন্সে সরকারি অফিসিয়াল ডিভাইসগুলোতে টিকটক অ্যাপ অবিলম্বে নিষিদ্ধ করার ঘোষণা করেছিলেন। এছাড়া যুক্তরাজ্যই ছিল প্রথম দেশ যারা অন্যান্য চীনা-মালিকানাধীন প্রযুক্তি হুয়াওয়ের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে।

ইইউ প্রতিষ্ঠান

ইউরোপীয় পার্লামেন্ট, ইউরোপীয় কমিশন এবং ইইউ কাউন্সিল সাইবার নিরাপত্তার উদ্বেগের বরাত দিয়ে তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের ডিভাইসে টিকটক নিষিদ্ধ করেছে।

ফ্রান্স

২৪শে মার্চ ফ্রান্সের সরকার ২.৫ মিলিয়ন বেসামরিক কর্মচারিদের ফোনে টিকটক, নেটফ্লিক্স এবং ইনস্টাগ্রামের মতো বিনোদনমূলক অ্যাপ্লিকেশন ইনস্টল এবং ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে।

নরওয়ে

২৩শে মার্চ নরওয়েজিয়ান পার্লামেন্ট টিকটককে অফিসের ডিভাইসে টিকটক নিষিদ্ধ করে।

বেলজিয়াম

১০ই মার্চ থেকে বেলজিয়াম সাইবার নিরাপত্তা, গোপনীয়তা এবং ভুল তথ্য সম্পর্কে উদ্বেগ উল্লেখ করে সরকারের মালিকানাধীন বা সরকারের টাকায় কেনা ডিভাইসগুলো থেকে অন্তত ছয় মাসের জন্য টিকিটক নিষিদ্ধ করে।

ভারত

২০২০ সালের জুনে ভারত টিকটকসহ বেশ কয়েকটি অ্যাপ নিষিদ্ধ করে। দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় বলে দাবি করেছিল দেশটি।

আফগানিস্তান

দেশটিতে টিকটক এবং পাবজি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তালেবানদের দাবি, এগুলো আফগান যুবকদের ‘বিপথে’ নিয়ে যাচ্ছে।

পাকিস্তান

পাকিস্তানে কমপক্ষে চারবার নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়ছে টিকটক অ্যাপটি। সর্বশেষ ২০২২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত চার মাসের নিষেধাজ্ঞা ছিল অ্যাপসটি। অ্যাপটিতে অনৈতিক এবং অশালীন বিষয়বস্তুর অভিযোগ এনে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল।

তাইওয়ান

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ডিভাইসে টিকটক এবং আরও কয়েকটি চীনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দ্বীপ রাষ্ট্রটিতে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে সন্দেহভাজন অবৈধ ক্রিয়াকলাপ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপের তদন্ত শুরু করে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

মার্কিন কংগ্রেস ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ফেডারেল ডিভাইসে টিকটক নিষিদ্ধ করার জন্য একটি বিল পাস করে। পরে চলতি বছরের ১৩ই মার্চ প্রতিনিধি পরিষদ অপ্রতিরোধ্যভাবে একটি বিল পাস করেছে যাতে টিকটকের বেইজিংভিত্তিক মূল কোম্পানিকে প্ল্যাটফর্ম থেকে সরে যেতে বা দেশব্যাপী নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে হবে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস, মেরিল্যান্ড, আলাবামা এবং উটাহসহ ২৫টিরও বেশি রাজ্যে কর্মীদের সরকারি ডিভাইসে টিকটক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

বোয়েস স্টেট ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অফ ওকলাহোমা, ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস-অস্টিন এবং ওয়েস্ট টেক্সাস এঅ্যান্ডএম ইউনিভার্সিটিগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিভাইস এবং ওয়াইফাই নেটওয়ার্কে টিকটক ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে।