9 January 2024 , 3:33:32 প্রিন্ট সংস্করণ
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে এক লাখের বেশি ভোট পেয়েও যেখানে হেরে যাওয়ার ঘটনা আছে ছয়টি, সেখানে ঢাকার একটি আসনে ২৫ হাজারেরও কম ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন একজন। ঘটনাটি ঘটেছে ঢাকা-৪ আসনে। যাত্রাবাড়ী ও শ্যামপুরের আংশিক এলাকা নিয়ে গঠিত আসনটিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে এই জয় পেয়েছেন আওলাদ হোসেন।
গত দুটি নির্বাচনে আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। সংসদ সদস্য হয়েছিলেন সংসদে প্রধান বিরোধী দলটির কো চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা। এবার তাকে ছাড় না দিয়ে আওয়ামী লীগ সেখানে প্রার্থী করে ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী সানজিদা খানমকে।নৌকা পেয়ে সানজিদা জয়ের আশায় ছিলেন। কিন্তু তাকে হতাশ করেন আওলাদ, যিনি ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনার একান্ত সচিব ছিলেন।
আওয়ামী লীগের ছাড় না পেলেও প্রার্থী হিসেবে থাকেন জাতীয় পার্টির বাবলাও। আওয়ামী লীগের ভোট ভাগাভাগির ফাঁক গলে জয়ের আশা ছাড়ছিলেন না তিনিও। তবে ভোটের হিসাবে দেখা যায়, সামান্য ব্যবধানে সানজিদাকে হারিয়ে বাজিমাত করে ফেলেন আওলাদ, অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দলের ভোট ভাগাভাগিতেও বহু ব্যবধানে তৃতীয় হন বাবলা।ট্রাক নিয়ে আওলাদের বাক্সে পড়ে ২৪ হাজার ৭৭৫, নৌকা নিয়ে সানজিদা পান ২২ হাজার ৫৭৭ ভোট। বাবলার লাঙ্গলের পক্ষে ছিলেন ৭ হাজার ৭৯৮ জন ভোটার।
বিএনপি-জামায়াত ও সমমনাদের বর্জনের এই নির্বাচনে আসনটিতে এবার ভোটারের উপস্থিতি ছিল বেশ কম। তিনজন আলোচিত প্রার্থী থাকলেও তারা ভোটার টানতে পারেননি। দুই লাখ ৫৪ হাজার ৬৭৭ জনের মধ্যে ৭৭টি কেন্দ্রে এবার ভোট দিয়েছেন ৫৭ হাজার ৯৭০। ভোটের হার ২২ দশমিক ৭৭ শতাংশ।২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনেও আসনটিতে খুব কম ভোট পড়েছিল। সেই নির্বাচনে বাবলাকে আসনটি ছেড়ে দেওয়ার পর আওলাদ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে লড়াই করেন। সেই নির্বাচনে বাবলা জেতেন ১৭ হাজার ৭৭২ ভোট পেয়ে। আওলাদের পক্ষে সে বছর রায় দেন ১৪ হাজার ৭৮৭ জন।
সেই হিসাবে আওলাদ এবার ভোট বাড়াতে পেরেছেন। কিন্তু সানজিদার সবশেষ যখন ভোটে লড়েন, তার তুলনায় ভোট কমে গেছে অনেকটাই।২০০৮ সালে নৌকা নিয়ে তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বীকে বলতে গেলে উড়িয়ে দেন। ৯২ হাজার ৯৫৫ ভোট পেয়ে জেতেন অবলীলায়। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আবদুল হাই, যিনি একাধিক নির্বাচনে জিতেছিলেন মুন্সিগঞ্জ সদর আসন থেকে। নতুন আসনে এসে তার পক্ষে ভোট পড়ে ৫০ হাজার ৭৯৯টি।
আওলাদ ও সানজিদার সম্মিলিত ভোটও এবার ১০ বছর আগে পাওয়া সানজিদার ভোটের অর্ধেকের কিছু বেশি। সেই নির্বাচনে জাতীয় পার্টিও ছিল আওয়ামী লীগের পক্ষে।দেশে সবচেয়ে কম ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য হলেও আসনটিতে সবচেয়ে বেশি কম ভোট পড়েছে এমন নয়। ঢাকা জেলার ২০টি আসনে ভোটের গড় হারের তুলনায় এই আসনটির ভোটের হার কিছুটা কম।ঢাকায় সবচেয়ে বেশি কম ভোট পড়েছে মিরপুরের একাংশ নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৫তে। মোট ভোটারের মধ্যে ১৩ দশমিক ০৪ শতাংশ। ভোটের হার কম থাকলেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী কামাল আহমেদ মজুমদার সেখানে জয় পেয়েছেন ৩৯ হাজার ৬৩২ ভোট পেয়ে, যা আওলাদের তুলনায় প্রায় ১৫ হাজার বেশি।
ঢাকায় আরো দুটি আসনে ২০ শতাংশের কম ভোট পড়েছে। এর মধ্যে ঢাকা ১৭ আসনে ১৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ, ঢাকা-৮ আসনে ১৮ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং ঢাকা-১৬ আসনে ১৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ ভোট পড়েছে।ঢাকার আরো পাঁচটি আসনে ভোটের হার ২০ এক কাছাকাছি। এর মধ্যে ঢাকা-১৪ আসনে ২০ দশমিক ৮২ শতাংশ, ঢাকা-১১ আসনে ২১ দশমিক ৫৯ শতাংশ, ঢাকা-৯ আসনে ২১ দশমিক ৬৫ শতাংশ, ঢাকা-৭ আসনে ২১ দশমিক ৬৬ শতাংশ এবং ঢাকা-১০ আসনে ২১ দশমিক ৭৮ শতাংশ ভোট পড়েছে।
এছাড়া ঢাকা-১৮ আসনে ২৩ দশমিক ০৮ শতাংশ, ঢাকা-৬ আসনে ২৩ দশমিক ২৬ শতাংশ, ঢাকা-৫ আসনে ২৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ এবং ঢাকা-১৩ আসনে ২৪ দশমিক ৪২ শতাংশ ভোট পড়েছে।ঢাকার আসনগুলোর মধ্যে ঢাকা-২০ আসনে সবচেয়ে বেশি ৪৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ ভোট পড়েছে। এছাড়া ঢাকা-৩ আসনে ৪১ দশমিক ৭০ শতাংশ, ঢাকা-১ আসনে ৩৭ দশমিক ১৯ শতাংশ ভোট পড়েছে।বাকি তিন আসনের মধ্যে ঢাকা-২ আসনে ৩১ দশমিক ৩৩ শতাংশ এবং ঢাকা-১২ আসনে ৩০ দশমিক ০৫ শতাংশ এবং ঢাকা-১৯ আসনে ২৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ ভোট পড়েছে।
ফরিদপুর-৪ আসনে আওয়ামী লীগের কাজী জাফর উল্যাহ নৌকা প্রতীক নিয়ে ১ লাখ ২৪ হাজার ৬৬ ভোট পেয়েও হেরে গেছেন। এবারের সংসদ নির্বাচনে যারা হেরেছেন, তাদের মধ্যে তিনিই সর্বোচ্চ পরিমাণে ভোট পেয়েছেন। আসনটিতে জিতেছেন আলোচিত সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন, যিনি ১ লাখ ৪৮ হাজার ৩৫ ভোট পেয়েছেন।
ঝিনাইদহ-২ আসনে নৌকা নিয়ে ১ লাখ ১৬ হাজার ২০৭ ভোট পেয়েও হেরেছেন আওয়ামী লীগের তাহজিব আলম সিদ্দিকী। ঈগল প্রতীক নিয়ে সেখানে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৭৭৮ ভোট পেয়ে জিতেছেন নাসির শাহরিয়ার জাহেদী।গোপালগঞ্জ-১ আসনে ঈড়ল প্রতীকে মো. কাবির মিয়া হেরেছেন ১ লাখ ৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে। আসনটিতে নৌকা নিয়ে ১ লাখ ১৮ হাজার ৭৫৭ ভোট পেয়ে জিতেছেন আওয়ামী লীগের ফারুক খান।
দিনাজপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোরঞ্জন শীল গোপাল নৌকা নিয়ে ১ রাখ ৬ হাজার ৪৯৯ ভোট পেয়েও হেরেছেন। সেখানে ট্রাক প্রতীকে মো. জাকারিয়া জিতেছেন ১ লাখ ১৫ হাজার ৫১৬ ভোট পেয়ে।ময়মনসিংহ-৪ আসনে আমিনুল হক ট্রাক নিয়ে ১ লাখ ৩ হাজার ৫৪৬ ভোট পেয়েও হেরেছেন। জিতেছেন নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহিত উর রহমান। তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ৪৭ হাজার ২৯২ ভোট।
এছাড়া পাবনা-৩ আসনে ১ লাখ ১৫৯ ভোট পেয়েও হেরেছেন ট্রাক মার্কার স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল হামিদ। আসনটিতে আওয়ামী লীগের মকবুল হোসেন জিতেছেন ১ লাখ ১৯ হাজার ৪৬৯ ভোট পেয়ে।আওয়ামী লীগ সভাপতির আসনটিতে মোট ভোটার দুই লাখ ৯০ হাজার ২৯৭ জন। এদের মধ্যে ভোট দিয়েছেন দুই লাখ ৫৩ হাজার ২৪৭ জন। ভোটের হার ৮৭ দশমিক ২৪ শতাংশ।আসনটিতে নৌকা প্রতীকে দুই লাখ ৪৯ হাজার ৯৬২ ভোট বা ৯৮ দশমিক ৭০ শতাংশ পেয়ে নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা।
প্রদত্ত ভোটের হার বিবেচনায় এককভাবে এটিও সর্বোচ্চ।অন্যদিকে সংখ্যায় সর্বোচ্চ দুই লাখ ৯৫ হাজার ২৯১ বা ৯৮ দশমিক ৪১ শতাংশ ভোট পেয়েছেন গোপালগঞ্চ-২ আসন থেকে নির্বাচিত শেখ ফজলুল করিম সেলিম। মোট তিন লাখ ৬০ হাজার ৬৩৩ জনের মধ্যে এ আসনে ভোট পড়েছে তিন লাখ ৩৫টি। ভোটের হার ৮৩ দশমিক ২০ শতাংশ।