জাতীয়

হানিফের আস্থাভাজন হাজী রবিউর এখন বিএনপি নেতা

আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফের হাতে ফুল দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগদান করার অভিযোগ ওঠা হাজী রবিউর রহমানকে শহর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক পদে মনোনীত করা হয়েছে। গুঞ্জন রয়েছে আওয়ামী লীগের যোগদানের পর সাবেক এমপি মাহবুব উল আলম হানিফের আস্থাভাজন হয়ে ওঠে হাজী রবিউর রহমান। গত ২৫ জানুয়ারি কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির আহবায়ক কুতুব উদ্দিন আহমেদ ও সদস্য সচিব প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার স্বাক্ষরিত ৩১ সদস্য বিশিষ্ট পৌর বিএনপির আহবায়ক কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। এই কমিটিতেই যুগ্ম আহ্বায়ক পদ পেয়েছেন হাজী রবিউর রহমান। এদিকে এই কমিটি ঘোষণা দেওয়ার পর রাতেই মশাল মিছিল করেছেন পৌর বিএনপির পদ প্রত্যাশী ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীরা। কমিটিতে ত্যাগীদের মূল্যায়ন করা না হলেও আওয়ামী লীগ নেতাদের মূল্যায়িত করা হয়েছে বলেও মশাল মিছিল থেকে দাবি তোলা হয়।

অন্যদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কর্তৃক আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ও অরাজনৈতিক কোন ব্যক্তিকে দলীয় পদে না আনার নির্দেশনা থাকলেও সেটা না মানার অভিযোগ উঠেছে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের বিরুদ্ধে। এছাড়া জেলা কমিটির অনেক নেতাকর্মীকে বিএনপির বিভিন্ন কমিটিতে আনার অভিযোগও রয়েছে জেলার এই দুই নেতার বিরুদ্ধে। এতে নেতাকর্মীদের মাঝে নানা ক্ষোভের জন্ম নিয়েছে। ত্যাগী ও পরীক্ষিত অনেক নেতাকর্মীরা মনে করছেন- তাহলে কি আবারো দেউলিয়ার পথে হাঁটছে বিএনপি। নবগঠিত পৌর বিএনপির কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে যাদের নাম বার বার শোনা যাচ্ছিল তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সদর উপজেলা বিএনপির সদ্য সাবেক আহ্বায়ক বশিরুল আলম চাঁদ, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও সাবেক প্যানেল মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী মিলন, কুষ্টিয়া জেলা যুবদলের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন অন্যতম।

তবে কোন এক অজ্ঞাত কারণে সকলকে পেছনে ফেলে আহ্বায়ক করা হয়েছে আলহাজ্ব শওকত হাসান বুলবুলকে। যদিও রাজনীতির মাঠে কখনো এই নামটি শোনা যায়নি। আহ্বায়ক পদপ্রার্থী কামাল উদ্দিন বলেন, ৯৬ সাল থেকে আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে আসছি আমি। গত ১৭ বছর এমন কোন আন্দোলন সংগ্রাম নেই যে সেখানে আমার অংশগ্রহণ ছিল না। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে যখন ধরপাকড় চলছিল তখনও আমি দলের মহাসচিবের পাশে ছিলাম। দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান (বীর উত্তম) এর মুখে কালি দেয় আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমার নেতৃত্বে যুবদলের কর্মীরা গিয়ে কালি মুছে দিয়ে এসেছিলাম। শহর বিএনপির সম্মেলনে আমার নেতৃত্বে হাজারের অধিক নেতাকর্মী অংশ নেয়। এতকিছুর পরেও আমাকে বাদ দিয়ে যার কোন নাম গন্ধ পাইনি তাকে করা হয়েছে আহ্বায়ক। এছাড়াও আওয়ামীলীগে যোগদান কারি রবিউর রহমানকে ৩নং যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে। যেটা খুবই দুঃখজনক।

কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক কাজল মাজমাদার বলেন, কুষ্টিয়া জেলা বিএনপিকে ধ্বংস করতে খেলায় মেতেছে জেলা বিএনপির আহবায়ক কুতুব উদ্দিন আহমেদ ও সদস্য সচিব প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার। তাঁরা সম্পর্কে মামা ভাগ্নে। বর্তমানে যারা তাদের তোষামোদি করছে তাদের দিচ্ছে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ। সে আওয়ামী লীগের দোসর হলেও তাদের কোন যায় আসে না। তার নমুনা নবগঠিত কুষ্টিয়া পৌর বিএনপির কমিটি। এখানে অযোগ্য ও আওয়ামীলীগে যোগদানকারিদের নিয়ে কমিটি করা হয়েছে। অনেক ত্যাগী ও যোগ্য নেতাকর্মীদের তাঁরা মূল্যায়ন করেনি। এভাবে চলতে থাকলে দলের ক্ষতি হবে বলেও জানান তিনি। এবিষয়ে হাজী রবিউর রহমানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার মেয়ের সাথে এক শিল্পপতির ছেলের বিয়ে হয়েছিল।

সেই সময় আমার নানা সমস্যা হচ্ছিল। আমি হাজী আবুল কাশেমকে বিষয়টি জানায় যে, আপনার সাথে এমপি’র (মাহবুব উল আলম হানিফ) ভালো সম্পর্ক। আপনি একটু বিষয়টি দেখেন। তিনি আমাকে এমপি’র (মাহবুব উল আলম হানিফ) বাসায় নিয়ে যায়। সেখান থেকে একটি ফুলের তোড়া দিয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা নাঈমুল ইসলাম শিপন একটি ছবি তুলে রাখে। আপনার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মামলা কয়টা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাকে পুলিশ হ্যারেজমেন্ট করেছে। তবে আমার নামে কোন মামলা নেই। এবিষয়ে কথা বলতে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির আহবায়ক কুতুব উদ্দিন আহমেদ ও সদস্য সচিব প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকারের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও কেউ ফোন রিসিভ করেননি।