7 July 2024 , 6:11:27 প্রিন্ট সংস্করণ
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) এআই প্রস্তুতি সূচকে ১৭৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১৩তম৷ সূচকে বাংলাদেশ থেকে এগিয়ে আছে ভারত, শ্রীলঙ্কা, ভুটান, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া৷ আর কেনিয়া, রুয়ান্ডা, ঘানা, সেনেগালের মতো আফ্রিকার দেশগুলোও এই সূচকে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে৷ এআইয়ের প্রস্তুতির সূচকে শীর্ষে রয়েছে সিঙ্গাপুর৷এই সূচক প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. বি এম মইনুল হোসেন বলেন, এটা আসলে এআই ব্যবহারের অবস্থা নয়, প্রস্তুতির সূচক৷
এটা করা হয়েছে যাতে দেশগুলো তাদের পলিসি ও প্রস্তুতির সিদ্ধান্ত নিতে পারে৷ এখানে অবকাঠামো, দক্ষ মানবসম্পদ, শ্রম আইন- এসব বিষয় তারা বিবেচনায় নিয়েছে৷ তাতে স্পষ্ট যে এআইর জন্য যে মানবসম্পদ দরকার সেই দিকে আমাদের উদ্যোগ তেমন নেই৷আইএমএফ বলছে এআই উৎপাদনশীলতা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও আয় বাড়াতে পারে৷ অনেক লোকের কর্মসংস্থান হতে পারে৷
তবে এটা বৈষম্যও বাড়াতে পারে, কাজও হারাতে পারেন অনেকে৷আইএমএফের গবেষণা অনুযায়ী এআই উন্নত অর্থনীতির দেশের ৩৩ শতাংশ, উদীয়মান অর্থনীতির দেশের ২৪ শতাংশ ও নিম্ন আয়ের দেশে ১৮ শতাংশ চাকরিকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে৷ অন্যদিকে এআই বিদ্যমান চাকরির উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে ব্যাপক সম্ভাবনা নিয়ে আসছে৷ড. বি এম মইনুল হোসেন বলেন, চাকরি হারানোর ঝুঁকি যেমন আছে তেমনি নতুন কর্মসংস্থানও হবে৷ আর তার জন্য প্রয়োজন হবে উচ্চ দক্ষতা৷
৫০০-র বেশি প্রতিষ্ঠান এআই নিয়ে কাজ করছে
বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতে এআই এর ব্যবহার বাড়ছে৷ বিশেষ করে টেলিযোগাযোগ খাত, মোবাইল ব্যাংকিং, মার্কেটিং৷ কৃষি খাতেও এর ব্যবহার শুরু হয়েছে বলে জানান এআই নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান টেক গার্লিক এর প্রধান নির্বাহী পরাগ ওবায়েদ৷তিনি জানান, বাংলাদেশে এখন ৫০০-র বেশি প্রতিষ্ঠান আছে যারা এআই এবং মেশিন লার্নিং নিয়ে কাজ করে৷ তবে প্রতিষ্ঠানের বাইরে ব্যক্তিগতভাবে কাজ করেন এরকম মানুষের সংখ্যা কমপক্ষে ১০ লাখ৷ বাংলাদেশে ২০০৮-০৯ সাল থেকে এআই নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু হয় বলে জানান তিনি৷
পরাগ ওবায়েদ বলেন, মোবাইল ফোন কোম্পানি, মোবাইল ব্যাংকিংসহ অনেক কর্পোরেট হাউজ এখন এআই টেকনোলজির সুবিধা নিচ্ছে৷বাংলাদেশের কৃষিখাতেও এর ব্যবহার শুরু হয়েছে৷ তার মতে, বাংলাদেশের সব খাতেই এআই এর সম্ভাবনা আছে৷ বিশেষ করে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রে এআই এর ব্যবহার অনেক ক্ষতি থেকে বাঁচিয়ে দিতে পারে বলে মনে করেন ওবায়েদ৷
সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা দরকার
বন্ডস্টেইন টেকনোলজিস-এর কো-ফাউন্ডার শাহরুখ ইসলাম জানান, এখন মার্কেটিং-এ দেশীয় এবং বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো এআই ব্যবহার করছে৷ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ পাচ্ছে৷ তবে আমাদের মাইন্ডসেটের এখনো তেমন পরিবর্তন আসেনি৷ আগে যখন কম্পিউটারের ব্যবহার শুরু হয় তখন চাকরি যাওয়ার ভয়ে অনেকে কম্পিউটার ব্যবহারকে নিরুৎসাহিত করতো৷ এখনো আমরা দেখছি বিমান বাংলাদেশের ওয়েবসাইট হ্যাক হওয়ার পরে কম্পিউটার বন্ধ করে রেখেছে৷ আসলে নতুন টেকনোলজিকে ওয়েলকাম করতে হবে৷
তার কথা, এজন্য সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা দরকার৷ ভারত সরকার গত এপ্রিল মাসে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এআই কোম্পানির কাছে এক লাখ গ্রাফিক প্রসেসিং ইউনিট (জিপিইউ) অর্ডার করেছে৷ জিপিইউ হলো এআই-এর কাঁচামাল৷ আর আমরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে এগুলো ইউএসএ বা সিঙ্গাপুর থেকে আনি৷ আমাদের প্রচুর ডলার খরচ হয়৷ সরকার যদি একটা এআই সেন্টার করে জিপিইউ এনে আমাদের কাছে ভাড়া দেয় তাহলে আমরা উদ্যোক্তারা লাভবান হবো৷
বাংলাদেশ কতটা প্রস্তুত?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবোটিক্স এন্ড মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান ড. সেঁজুতি রহমান বলেন, আমরা আসলে এখনো এআই প্রযুক্তির জন্য প্রস্তুত নই৷ আমরা এখনো ডিজিটাল বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি৷ আমাদের প্রযুক্তির তৃতীয় যুগে যেতে হলে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত তরুণ লাগবে৷ সেই ব্যবস্থা আমাদের এখানে নেই, প্রতিষ্ঠান নেই৷ আবার যারা তৈরি হচ্ছে তাদের আমরা ধরে রাখতে পারছি না, তারা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে৷ তাদের ধরে রাখার ব্যবস্থা যেমন করতে হবে, তেমনি এআই আমাদের বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষায় যুক্ত করতে হবে৷