জাতীয়

যে কারণে ঢাকা দক্ষিণ সিটির জন্মসনদে মিলছে না পাসপোর্ট

যে কারণে ঢাকা দক্ষিণ সিটির জন্মসনদে মিলছে না পাসপোর্ট

জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন সার্ভার সমস্যার সমাধান হয়েও হচ্ছে না। নগরবাসীকে এই ভোগান্তি থেকে মুক্তি দিতে এ সংক্রান্ত নতুন সার্ভার তৈরি করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। কিন্তু এর সঙ্গে জাতীয় সার্ভারের সমন্বয় না হওয়ায় পাসপোর্ট করা যাচ্ছে না। ফলে বিগত প্রায় ৬ মাস ধরে মানুষ সীমাহীন ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। ডিএসসিসির সেবা সহজ করার উদ্যোগ উলটো ভোগান্তি বাড়িয়েছে।

এতে নগর সংস্থাটির ওপর অসন্তোষ প্রকাশ করছেন সাধারণ মানুষ।সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন কার্যালয়ের সঙ্গে গত বছর ডিএসসিসির টানাপোড়েন শুরু হয়। জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনের ফি আদায়কে কেন্দ্র করে এর শুরু। পরে সার্ভারের দুর্বলতা ও ভোগান্তির বিষয়গুলো সামনে আসে। এসব টানাপোড়েনে গত বছরের জুলাই থেকে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন সার্ভার ব্যবহার বন্ধ করে দেয় ডিএসসিসি। গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ওই সার্ভার বন্ধ ছিল। আর ওই সময়ে নতুন সার্ভার তৈরি করেছে ডিএসসিসি।

অক্টোবর থেকে ডিএসসিসি নিজস্ব সার্ভারে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করেছে। এতে নিবন্ধনের আবেদন সহজ হয়েছে। তবে অন্য স্থানে সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে।সূত্র জানায়, নতুন সার্ভারে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন কার্যক্রম শুরুর পর গত বছরের অক্টোবরে ২৬টি মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থাকে চিঠি দিয়েছে ডিএসসিসি। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো ডিএসসিসির সার্ভার তাদের সংস্থার সার্ভারের সঙ্গে সমন্বয় করে নিলে ওই জন্ম-মৃত্যু সনদে ওই সেবা কার্যক্রম পেয়ে যাবেন।

প্রায় ৬ মাস হয়ে গেলেও এখনো সব সংস্থা এই কাজটি করনি। এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন মানুষ। বিশেষ করে পাসপোর্ট অধিদপ্তরে ভোগান্তির মাত্রা চরমে পৌঁছেছে। বড়দের জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে পাসপোর্ট করা গেলেও শিশুদের তা না থাকায় ডিএসসিসির জন্মসনদে পাসপোর্ট করানো যাচ্ছে না।তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, নতুন সার্ভারে কাজ শুরুর পর ডিএসসিসি থেকে মাসে গড়ে ১৫ হাজার জন্ম-মৃত্যু সনদ নিয়েছে মানুষ। নতুন জন্মসনদে শুধু স্কুলে ভর্তি করা যাচ্ছে। এর বাইরে অন্য কোনো সেবা মিলছে না।

সিটি করপোরেশন সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে যার যার সার্ভারে ডিএসসিসির জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন সার্ভার সংযুক্ত করতে বললেও কয়েকটি সংস্থা ছাড়া অন্যরা তা করতে ঢিলেমি করছে। এতে করে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন অভিভাবকরা। এই জটিলতায় অনেক পরিবারের জরুরি কাজে শিশুকে নিয়ে বিদেশ যাওয়া প্রয়োজন হলেও তারা তা করতে পারছে না।তথ্যানুসন্ধানে আরও জানা যায়, পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সঙ্গে ডিএসসিসির সার্ভারের সমন্বয় না হওয়ায় বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছে মানুষ।

ডিএসসিসি বিষয়টি সমাধানে কয়েক দফা পাসপোর্ট অধিদপ্তর, সুরক্ষা বিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সভা করেছে। কাজটি করতে সংশ্লিষ্টরা রাজি হলেও খুবই ধীরগতিতে চলছে। এ কারণে এত দুর্ভোগ হচ্ছে মানুষের। পরিস্থিতি উত্তরণে সংশ্লিষ্টদের আরও সক্রিয় হওয়া দরকার। নইলে নগরবাসীর ভোগান্তি দীর্ঘায়িত হবে-এমন অভিমত ডিএসসিসি সংশ্লিষ্টদের। জানতে চাইলে ডিএসসিসি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, এখানে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন স্বতন্ত্র সার্ভার হওয়ায় অনেক সুবিধা হয়েছে।

নগরবাসীর এখন আগের মতো ভোগান্তি পোহাতে হয় না। তবে এ সার্ভারটি সরকারের ২৬টি মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। সে কার্যক্রম চলমান। ইতোমধ্যে অনেকগুলো হয়ে গেছে। পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সঙ্গে ডিএসসিসির সার্ভারের সমন্বয় করতে কয়েক দফা সভা হয়েছে। আশা করি শিগগিরই পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সঙ্গে ডিএসসিসির সার্ভারের সমন্বয়ের কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।

যেসব কাজে জন্মসনদ লাগে : বিভিন্ন সেবা বা প্রয়োজনে জন্মসনদ লাগে, সেগুলো হলো-পাসপোর্ট ইস্যু, বিবাহ নিবন্ধন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি, সরকারি-বেসরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত সংস্থায় নিয়োগ, ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু, ভোটার তালিকা প্রণয়ন, জমি-ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন, ব্যাংকে হিসাব খোলা, আমদানি-রপ্তানির লাইসেন্স প্রাপ্তি, পানি-বিদ্যুৎ-গ্যাস ও টেলিফোন সংযোগ প্রাপ্তি, ট্যাক্স আইডেনটিফিকেশন নম্বর (টিআইএন) প্রাপ্তি, ঠিকাদারের লাইসেন্স প্রাপ্তি, বাড়ির নকশা অনুমোদন প্রাপ্তি, গাড়ির রেজিস্ট্রেশন, ট্রেড লাইসেন্স, জাতীয় পরিচয় প্রাপ্তি এবং বিভিন্ন প্রয়োজনে বয়স প্রমাণ করতে এ সনদের প্রয়োজন হয়ে থাকে।

মৃত্যু নিবন্ধন সনদ যেসব কাজে লাগে : ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার ওয়ারিশদের বিভিন্ন কাজে মৃত্যুসনদের প্রয়োজন হয়। প্রধানত যেসব কাজে মৃত্যুসনদ লাগে তা হলো-মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বণ্টন, পারিবারিক পেনশন প্রাপ্তি এবং দেশের প্রকৃত জনসংখ্যা নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে।এর আগে ১৮৭৩ সালের ২ জুলাই ব্রিটিশ সরকার অবিভক্ত বাংলায় জন্মনিবন্ধনসংক্রান্ত আইন জারি করে। তার আলোকে ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে ইউনিসেফ-বাংলাদেশের সহায়তায় পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে ২৮টি জেলায় ও ৪টি সিটি করপোরেশনে জন্মনিবন্ধনের কাজ নতুন করে শুরু হয়।