20 February 2024 , 4:15:19 প্রিন্ট সংস্করণ
চোখে দেখতে না পেলেও হার মানতে নারাজ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী খন্দকার নাবিলা তাবাসসুম (১৮)। নানা প্রতিকূলতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় লালমনিরহাট শহরের চার্চ অব গড উচ্চ বিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগ থেকে অংশ নিয়েছেন তিনি। লালমনিরহাট সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, বিজ্ঞান ভবনের দ্বিতীয় তলায় ১১২ নম্বর কক্ষে পরীক্ষা দিচ্ছেন নাবিলা।
তাকে সাহায্য করছেন অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী রহিমা খাতুন। প্রশ্নের উত্তর মৃদু কণ্ঠে নাবিলা বলে দিচ্ছে, আর তা শুনে খাতায় লিখছে রহিমা।লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার সাপ্টিবাড়ি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী রহিমা খাতুন বলেন, নাবিলা আপু উত্তর বলে দেন, আমি খাতায় লিখি। আপু এসএসসিতে ভালো রেজাল্ট করলে আমিও খুশি হব। আমার ভালো লাগছে, একজন মেধাবী ছাত্রীকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণে সহায়তা করতে পারায়।
খন্দকার নাবিলা তাবাসসুম বলেন, পাঁচ বছর বয়সে আমি পুরোপুরি দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলি। পরিবারের সদস্যরা চিকিৎসা করার পরও কোনও ফল হয়নি। এর পর থেকে আমি আরডিআরএসের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন কেন্দ্রে রয়েছি। আমি উচ্চশিক্ষা গ্রহণ শেষে আমার মায়ের মতো শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে নিতে চাই।আরডিআরএস বাংলাদেশ সংস্থা পরিচালিত লালমনিরহাটে অবস্থিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন কেন্দ্রের কাউন্সিলর নুরবানু আক্তার জানান, খন্দকার নাবিলা তাবাসসুম ১১ বছর ধরে লালমনিরহাট সদরের হাঁড়ি ভাঙ্গায় অবস্থিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে পড়াশোনা করছে।
শুধু পড়াশোনায় নয়, কবিতা আবৃত্তি ও সংগীতচর্চায় নাবিলা সুনাম অর্জন করেছে।লালমনিরহাট চার্চ অব গড উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মৃদুল কান্তি আচার্য জানান, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নাবিলা পড়ালেখায় খুবই মনোযোগী। আমাদের স্কুলে এক থেকে তিনের মধ্যে সব সময় তার রোল ছিল। আমরা শিক্ষকরা আশাবাদী এসএসসিতে ভালো ফল করবে নাবিলা।নাবিলার মা স্কুল শিক্ষক খন্দকার ফারজানা আফরিন বলেন, আমার মেয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা জয় করে এত দূর এসেছে, সামনে আরও এগিয়ে যেতে চায়।
আমার মতো শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে নিতে চায়। আমি তার জন্য গর্বিত। আপনারা সবাই ওর জন্য দোয়া করবেন, যেন সে তার স্বপ্ন পূরণ করতে পারে।লালমনিরহাট সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিব ও প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আইয়ুব আলী জানান, নাবিলা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হওয়ায় শিক্ষা বোর্ডের নিদের্শনায় পরীক্ষার নির্ধারিত সময়ের চেয়ে তাকে অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় বেশি দেয়া হয়েছে।