27 January 2024 , 5:40:13 প্রিন্ট সংস্করণ
যমজ বোন হিসেবে জন্মেছিলেন অ্যামি এবং আনো। কিন্তু জন্মের পরপরই তাদেরকে মায়ের কাছ থেকে সরিয়ে নিয়ে আলাদা দুটি পরিবারে বিক্রি করে দেওয়া হয়। এর বহু বছর পর টিভি ট্যালেন্ট শো আর টিকটক ভিডিও’র মাধ্যমে অবশেষে তাদের পুনর্মিলন হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব এশিয়ার দেশ জর্জিয়ায়। পেছনের দিকে ফিরে তাকিয়ে এই দুই বোন বুঝতে পেরেছে যে, জর্জিয়ার হাসপাতালগুলো থেকে চুরি যাওয়া এবং বিক্রি হওয়া হাজার হাজার শিশুর মধ্যে ছিল তারা দুইজনও।
সাম্প্রতিক সময়ে ২০০৫ সালেও এমন শিশু বিক্রির ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে সরকারি তদন্ত চললেও এর জন্য এখনও কাউকে দায়ী করা যায়নি। দুই বোন এখন এর জবাব চায়।৯ বছর পর জর্জিয়ার এই যমজ বোনদের পুনর্মিলনের কাহিনী তুলে ধরেছে বিবিসি।অ্যামি এবং আনোর যখন ১২ বছর বয়স তখন থেকেই তারা একে অপরের খোঁজ শুরু করে। অ্যামি তার পছন্দের রিয়ালিটি শো ‘জর্জিয়া’স গট ট্যালেন্ট’ দেখার সময় একটি মেয়েকে নাচতে দেখে। সেই মেয়েটি দেখতে ছিল হুবাহু অ্যামির মতোই। সবাই জিজ্ঞেস করছিল, অ্যামি কেন অন্য নামে নাচছে?
বিষয়টি নিয়ে অ্যামি তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছিল। তবে পরিবার সেকথা পাত্তা দেয়নি। এর সাত বছর পর ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে টিকটকে নীল চুলের ভিডিও পোস্ট করে অ্যামি। আর ৩২০ কিলোমিটার দূর থেকে ১৯ বছর বয়সী আনোও টিকটক ঘাঁটতে ঘাঁটতে দেখে এক নীল চুলের মেয়ের ভিডিও।এই টিকটক ভিডিও আনোকে পাঠিয়েছিল তার এক বান্ধবী। ভিডিও’র মেয়েটি দেখতে আনোর মতো একইরকম হওয়ায় কৌতুহলি হয়ে তার বান্ধবী ভিডিওটি তাকে পাঠায়।
তারপর ভিডিও’র সেই মেয়েটিকে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করেছে আনো। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ভিডিওটি শেয়ার করে আনো। যদি কেউ মেয়েটিকে চিনে থাকে সেই আশায়।এই ভিডিও দেখার পর দুইজনকে ফেইসবুকে মিলিয়ে দেন অ্যামির পরিচিত একজন। তখন অ্যামি জানতে পারে যে, জর্জিয়া’স গট ট্যালেন্ট অনুষ্ঠানে যে মেয়েটি নেচেছিল সে আনো। ফেইসবুকে যুক্ত হওয়ার পর তারা কথা বলে। অ্যামি লেখে, “আমি অনেকদিন ধরে তোমাকে খুঁজছি।” আনো উত্তরে লেখে, “আমিও।
পরে তারা নিজেদের মধ্যে কিছু মিল খুঁজে পায়। তারা দুজনই পশ্চিম জর্জিয়ায় কির্তসখি মাতৃত্বকালীন হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেছিল। জন্ম সনদ অনুযায়ী, তাদের জন্ম তারিখে কয়েক সপ্তাহের ব্যবধান ছিল। তাতে মনে হয়েছিল, তারা যমজ বোন হতে পারে না। অথচ তারা দেখতে একইরকম ছিল।এছাড়াও আরও অনেক মিল ছিল তাদের মধ্যে। তারা একই গান পছন্দ করত। উভয়েই নাচ পছন্দ করত। এমনকী একই চুলের স্টাইল ছিল। তাদের একই জেনেটিক রোগ ডিসপ্লাসিয়াও ছিল।
দুইজন এক পর্যায়ে দেখা করে। প্রথম একে অপরকে দেখে তারা। অ্যামি জানায়, এই দর্শন একেবারে আয়নায় নিজেকে দেখার মতো ছিল। ঠিক অবিকল মুখ। হুবহু কণ্ঠ।তারপর তারা নিজ নিজ পরিবারের মুখোমুখি হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তখনই প্রথম তারা জানতে পারে যে, তাদেরকে দত্তক নেওয়া হয়েছিল ২০০২ সালে কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে।এরপর জন্মের সময় অবৈধভাবে দত্তক নেওয়া শিশুদের পরিবারকে পুনরায় একত্রিত করার জন্য কাজ করা একটি ফে্ইসবুক গ্রুপ খুঁজে পায় অ্যামি। সেখানে তাদের গল্প বলে।
সেই গল্প পড়ে জার্মানির এক তরুণী জানান, তার মা ২০০২ সালে কির্তসখি মাতৃকালীন হাসপাতালে যমজ মেয়ের জন্ম দিয়েছিলেন এবং তারা মারা গেছে বলে জানানো হয়েছিল। কিন্তু এখন তার ওই বক্তব্য নিয়ে সন্দেহ হচ্ছে।তারপর ডিএনএ পরীক্ষায় জানা যায়, ফেইসবুক গ্রুপে কথা বলা মেয়েটি তাদের বোন। জার্মানিতে সে তার মা আজার সঙ্গে থাকে। তখন আজার সঙ্গে দেখা করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে অ্যামি। তবে আনো বিষয়টি বিশ্বাস করতে সময় নিচ্ছিল।কিন্তু শেষ পর্যন্ত অ্যামি এবং আনো লাইপজিগের হোটেলে তাদের জন্মদাত্রী মায়ের সঙ্গে দেখা করার প্রস্তুতি নেয়। আনো মন বদল করে ফিরে আসতে চেয়েছিল।কিন্তু পরে একটা গভীর শ্বাস নিয়ে সে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
তাদের জন্মদাত্রী মা অন্য ঘরে অপেক্ষা করছিলেন।দরজা খোলে অ্যামি। তারা দুজনেই রুমে ঢোকে। হারানো মেয়েরা ফিরে আসায় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন মা। দুজনকেই শক্তভাবে জড়িয়ে ধরেন তিনি। ফিরে পাওয়ার আনন্দে তাদের মুখের ভাষা হারিয়ে যায়। চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরে অ্যামির।তারপর কিছুটা স্বাভাবিক হলে তারা তিনজন একান্তে গল্প শুরু করে। মা তাদেরকে জানান, দুই বোনকে জন্ম দেওয়ার পর অসুস্থ হয়ে কোমায় চলে গিয়েছিলেন তিনি। যখন জাগলেন, তখন হাসপাতালের স্টাফরা তাকে বলেছিল, জন্মের পরপরই দুই শিশু মারা গেছে।আর এখন সেই হারানো মেয়েদের ফিরে পেয়ে জীবনের নতুন অর্থ খুঁজে পেয়েছেন বলে জানান এই মা।