ভিন্ন স্বাদের খবর

যে মেলায় মাছ কেনা নিয়ে হয় জামাই-শ্বশুরের প্রতিযোগিতা

যে মেলায় মাছ কেনা নিয়ে হয় জামাই-শ্বশুরের প্রতিযোগিতা

গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার বিনিরাইল গ্রামে সোমবার (১৫) জানুয়ারি দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়েছে জামাই মেলা। মেলায় বড় আকর্ষণ ছিল বড় মাছ কিনতে জামাই-শ্বশুরের প্রতিযোগিতা।জানা গেছে, প্রতিবছর মাঘ মাসের প্রথম দিনে মেলা বসে।

দিনটির জন্য সারা বছর অপেক্ষায় থাকে উপজেলার সর্বস্তরের মানুষ। কারণ জামাই মেলার মূল আকর্ষণই হলো জামাইদের বড় মাছ কেনার প্রতিযোগিতা।বিনিরাইল ও এর আশপাশের গ্রামে যাঁরা বিয়ে করেছেন, সেসব জামাই এই মেলার মূল ক্রেতা। জামাইরা চান সবচেয়ে বড় মাছটি কিনে শ্বশুরবাড়ি নিয়ে যেতে।

আবার শ্বশুরদের মধ্যেও প্রতিযোগিতা চলে মেলার সবচেয়ে বড় মাছটি কিনে জামাইকে আপ্যায়ন করার ক্ষেত্রে। বিনিরাইলের মেলা যেন জামাই-শ্বশুরের বড় মাছ কেনার এক খেলা। লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুধু উপজেলার লোকই নয়, আনন্দের এ মেলা উপভোগ করতে টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ থেকেও ছুটে এসেছে অনেকে।

এবারের মেলায় প্রায় দুই শতাধিক মাছ ব্যবসায়ী বাহারি প্রজাতির মাছ নিয়ে এসেছেন।মাছের মধ্যে ছিল সামুদ্রিক পাখি মাছ, চিতল, বাঘাইড়, আইড়, বোয়াল, কালিবাউশ, পাবদা, গুলশা, গলদা চিংড়ি, বাইম, কাইক্কা, রূপচাঁদাসহ নানা জাতের দেশি মাছ। মাছ ছাড়াও মেলায় আসবাব, খেলনা, মিষ্টি ইত্যাদির দোকানও ছিল প্রচুর।

ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলা থেকে মেলায় আসা মাছ ব্যবসায়ী রফিক জানান, তিনি ২২ বছর ধরে এই মেলায় মাছ বিক্রি করেন। ঐতিহ্যের কারণে বিনিরাইলের জামাই মেলায় প্রচুর মানুষ আসে। বেচা-বিক্রি মুখ্য নয়, আনন্দ-উৎসব হিসেবে তিনি মেলায় অংশগ্রহণ করেন।মেলায় আসা জামালপুর গ্রামের জামাই কামাল হোসেন জানান, শ্বশুরবাড়িতে মাছ নিয়ে যাওয়া বলে কথা।

এলাকার সব জামাইয়ের নজরই থাকে মেলার বড় মাছটির দিকে। স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ীরা সপ্তাহখানেক ধরে বড় বড় মাছ সংগ্রহ করে রাখেন। সে অনুযায়ী মাছের দামও হাঁকানো হয়।জামাই মেলা আয়োজক কমিটির সভাপতি কিশোর আকন্দ জানান, প্রায় ২৫০ বছর ধরে এ মেলার আয়োজন হয়। শুরুতে খুবই ক্ষুদ্র পরিসরে হতো। প্রথমে শুধু হিন্দু ধর্মাবলম্বীরাই মেলার আয়োজন করত।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মেলাটি এখন সর্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে।ঐতিহ্যবাহী এ মেলা সম্পর্কে কালীগঞ্জের জামালপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান ফারুক মাস্টার বলেন, মাছের মেলাটি এ অঞ্চলের ঐতিহ্যের ধারক। মেলায় বেচাকেনা যাই হোক, এ মেলা আমাদের ঐতিহ্য আর কৃষ্টি-কালচার বহন করছে, এটাই সবচেয়ে বড় কথা।

আরও খবর

Sponsered content