24 December 2023 , 6:52:25 প্রিন্ট সংস্করণ
গাজার উত্তরাঞ্চলে হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি বাহিনীর লড়াই আরো তীব্র হয়েছে। ইসরায়েল যেকোনো মূল্যে ওই অঞ্চলের পূর্ণ দখল নিতে চাইছে।গত ৭ অক্টোবর গাজা থেকে ইসরায়েলের উপর ফিলিস্তিনিদের সশস্ত্র সংগঠন হামাসের হামলার পর থেকে ছোট্ট এই ভূখণ্ডের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। তাদের হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
আহত হয়েছেন আরো প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। বাস্তুচ্যুত বলতে গেছে গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দার প্রায় সবাই। তারা প্রাণ বাঁচাতে গাজার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটছে।ইসরায়েলের হামলায় গাজায় যে মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে তা বন্ধে জাতিসংঘসহ নানা মানবাধিকার সংগঠন থেকে আহ্বান জানানো হচ্ছে। কিন্তু ইসরায়েল এ যুদ্ধকে তাদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই বলে বর্ণনা করে হামাসকে নির্মূল করে গাজার উপর তাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত থামবে না বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছে।
এ যুদ্ধে তারা পাশে পেয়েছে দীর্ঘদিনের মিত্র যুক্তরাষ্ট্রকে। যুক্তরাষ্ট্র শুরু থেকে এ যুদ্ধকে ইসরায়েলের আত্মরক্ষার লড়াই বলে আসছে।যে কারণে সম্প্রতি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে সংযুক্ত আরব আমিরাতের উত্থাপন করা একটি প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র ভিটো দিয়েছে। ওই প্রস্তাবে গাজায় ‘অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান’ এবং ত্রাণ সরবরাহ বাড়ানোর কথা বলা ছিল। ‘অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান’ নিয়ে তীব্র আপত্তি তোলে যুক্তরাষ্ট্র। এ নিয়ে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বিতর্ক এবং ভোটাভুটি পিছিয়ে দেওয়ার পর শেষ পর্যন্ত প্রস্তাব থেকে ‘অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান’ কথাটি ফেলে দিতে হয়।
তার পরিবর্তে ‘লড়াই স্থায়ীভাবে বন্ধের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার’ আহ্বান জানানো হয়। শুক্রবার ওই প্রস্তাবের উপর ভোট হয় এবং ১৫ সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ১৩ ভোট পেয়ে প্রস্তাবটি পাস হয়। ভোট দান থেকে বিরত ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া।জাতিসংঘের প্রস্তাব পাসের পর শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন টেলিফোনে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে গাজার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছে বলে হোয়াইট হাউজ থেকে জানানো হয়।
নেতানিয়াহুর সঙ্গে আলোচনার বিস্তারিত জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন বাইডেন। তিনি এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, এটি ব্যক্তিগত আলোচনা ছিল।তবে আমি তাকে (গাজায়) যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাইনি।যদিও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা চান এবং আশা করছেন ইসরায়েল শীঘ্রই গাজায় তাদের সামরিক অভিযানের গতি পরিবর্তন করবে এবং হামলার তীব্রতা কমিয়ে বরং বেছে বেছে হামাস নেতৃত্ব এবং হামাসের অবকাঠামোর উপর হামলা চলাবে। তাতে সাধারণ ফিলিস্তিনিদের হতাহতের সংখ্যা কমে আসবে।
ইসরায়েলের হামলায় গাজায় বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের হতাহতের সংখ্যা বাড়তে থাকায় যুক্তরাষ্ট্রের উপর আন্তর্জাতিক চাপ বড়াছে। বাইডেন যেভাবে গাজা যুদ্ধে সাধারণ ফিলিস্তিনিদের দুর্দশার বিষয়টি পুরোপুরি উপেক্ষা করে অন্ধভাবে ইসরায়েলকে সমর্থন করে যাচ্ছেন তাতে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ, এমনটি ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভেতরও বাইডেনের বিরুদ্ধে মতবিরোধ জোরাল হচ্ছে।
সম্প্রতি নিউ ইয়র্ক টাইমস/সিয়েনা কলেজ পোল এর একটি জনমত জরিপে দেখা গেছে, ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সী মার্কিন ভোটারের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ গাজা যুদ্ধ নিয়ে বাইডেনের অবস্থানের সঙ্গে দ্বিমত পোষন করেছেন।আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। ভোটারদের এই মনভাব নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে বলে অনেকে ধারণা করছেন।