31 August 2023 , 5:07:08 প্রিন্ট সংস্করণ
দুবাই থেকে পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) জাতিসংঘের ড্রাগ ও অপরাধবিষয়ক অফিসের (ইউএনওডিসি) গ্লোব-ই নেটওয়ার্কের সহায়তা নেবে । এ লক্ষ্যে এরই মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি পাঠিয়েছে কমিশন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে।
তারা অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় ইউএনওডিসি অফিসে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধির মাধ্যমে বিষয়টি অবগত করবে।দুদক সূত্র জানায়, এক দেশের সঙ্গে আরেক দেশের দুর্নীতির তথ্য আদান-প্রদানে গ্লোব-ই নেটওয়ার্ক হলো খোদ জাতিসংঘের ইউএনওডিসির একটি প্ল্যাটফর্ম।
যেসব দেশ এই প্ল্যাটফর্মের সদস্য হবে, সেসব দেশকে তথ্য পেতে সহায়তা করবে তারা। এর মুখপাত্র সংশ্লিষ্ট দুই দেশের দায়িত্বশীল প্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেবেন; উভয় পক্ষের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদানে যাবতীয় সহায়তা প্রদান করবেন।জানা গেছে, দুবাইয়ে ৫৪৯ প্রবাসী বাংলাদেশির নামে থাকা ফ্ল্যাটসহ অন্যান্য সম্পদের তথ্য সংগ্রহ ও সেগুলো ফেরত আনতে কার্যক্রম পরিচালনার জন্যই দুদক জাতিসংঘের গ্লোব-ই নেটওয়ার্কের সদস্য হওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
দুদক দুবাইয়ে প্রবাসী বাঙালিদের তথ্য সংগ্রহ করতে এরই মধ্যে অনুসন্ধান শুরু করেছে। এই পর্যায়ে দুদকের উচ্চ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, দুবাইয়ে ৫৪৯ বাংলাদেশি যেসব সম্পদ/সম্পত্তি অর্জনে বিনিয়োগ করেছেন, সেই অর্থ বৈধভাবে নেওয়া হয়নি। ওই সব অর্থ পাচার করা হয়েছে। পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে দুদক নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছে। ইউএনওডিসির গ্লোব-ই নেটওয়ার্কের সদস্য হতে চাওয়া তারই অংশ। ওই প্ল্যাটফর্মের সদস্য হতে পারলে এই অনুসন্ধান অনেকটাই এগিয়ে যাবে।
বাংলাদেশিদের পাচার করা ৩১৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে দুবাইতে ৯৭২টি ফ্ল্যাট/আবাসনের মালিক হওয়ার অভিযোগটি অনুসন্ধান করছে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক রামপ্রসাদ মণ্ডলের নেতৃত্বে বিশেষ একটি টিম। চলতি বছরের এপ্রিলে অনুসন্ধান শুরু করা হয়েছে।তথ্য সংগ্রহের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
বিদেশ থেকে সুনির্দিষ্টভাবে দুর্নীতির তথ্য সংগ্রহ করা একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ব্যাপার। বিএফআইইউ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকুয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠিয়ে তথ্য পাওয়া দুরূহ ব্যাপার হয়ে পড়েছে। এ কারণেই কমিশন ইউএনওডিসির গ্লোব-ই নেটওয়ার্কের সদস্য হতে চায়।দুদক সূত্র জানায়, সংযুক্ত আরব আমিরাতের গোল্ডেন ভিসাধারী ৫৪৯ বাংলাদেশি দুবাইতে সম্পদ অর্জন করেছেন। আবার অনেক প্রবাসী সেকেন্ড হোম প্রকল্পের আওতায় মালয়েশিয়ায় ফ্ল্যাট/বাড়ির মালিক হয়েছেন।
এ ছাড়া কানাডার বেগমপাড়ায় আছে বাংলাদেশিদের বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ।যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড ডিফেন্স স্টাডিজ (সিএফএডিএস) গত বছরের মে মাসে তাদের এক গবেষণা প্রতিবেদনে উপসাগরীয় দেশগুলোতে মূলত পাচার করা অর্থ দিয়ে আবাসন সম্পত্তি কেনার বিষয়টি তুলে ধরেছে। তথ্য লুকিয়ে ৫৪৯ জন বাংলাদেশি দুবাইয়ে ৩১৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে মোট ৯৭২টি আবাসন ক্রয়ের বিষয়টিও ওই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
আবাসন খাতের ওই সব সম্পত্তির মধ্যে ৬৪টি দুবাইয়ের অভিজাত এলাকা দুবাই মেরিনা ও ১৯টি পাম জুমেইরাহতে অবস্থিত। সেখানে অন্তত একশটি ভিলা ও কমপক্ষে পাঁচটি ভবনের মালিক প্রবাসী বাংলাদেশি। এর মধ্যে চার-পাঁচজন বাংলাদেশি প্রায় ৪৪ মিলিয়ন ডলারের সম্পত্তির মালিক।গত ১৫ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুবীর নন্দী দাস হাইকোর্টে একটি রিট করেন। ওই আবেদনের শুনানি শেষে দুবাইয়ে ৫৪৯ বাংলাদেশির সম্পদের বিষয়টি অনুসন্ধানের জন্য দুদকসহ চারটি সংস্থার প্রতি আদেশ দেন সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ।