জাতীয়

নির্বাচনে ৯ শতাধিক বিচারক প্রয়োজন

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্নে পরিচালনার জন্য ৯ শতাধিক বিচারকের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল বুধবার প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি পরিচালনা এবং নির্বাচন চলাকালে সংক্ষিপ্ত অপরাধের বিচারের জন্য জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের এই প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি ভোট গ্রহণের আগে প্রার্থিতা নিয়ে যেসব মামলা উচ্চ আদালতে হবে, সে ব্যাপারে ইসিকে নোটিশ প্রদান ও যুক্তিসংগত শুনানির সুযোগ দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। ইসি ও বৈঠক সূত্রে এসব খবর জানা গেছে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল ও চার কমিশনার বিচার বিভাগের সহযোগিতা চাওয়ার জন্য প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের সঙ্গে বৈঠক করতে সুপ্রিম কোর্টে যান। দুপুর ২টা ৫৫ মিনিট থেকে বিকেল পৌনে ৪টা পর্যন্ত এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান বিচারপতির খাস কামরায় অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. গোলাম রব্বানী, হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার মুন্সী মো. মশিয়ার রহমান, আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান প্রমুখ।

প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বৈঠক শেষে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, বিচারকরা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রোরাল ইনকোয়ারি (নির্বাচনী অনুসন্ধান) কমিটির দায়িত্ব পালন করে থাকেন। কিন্তু এবার নির্বাচন চলাকালীন (ডিসেম্বর মাস) সিভিল কোর্টের বিচারকরা ভ্যাকেশনে থাকবেন। তাই প্রধান বিচারপতিকে জানিয়ে রেখেছি যেন ওই সময়ে বিচারকরা দায়িত্ব চলমান রাখেন। আর জানুয়ারি মাসে তো বিচারকরা আগের মতো করেই দায়িত্ব পালন করবেন। এইটুকু আলোচনা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি সিইসিকে আশ্বস্ত করেছেন বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে ইসিতে ১৪০টি নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি গঠনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। প্রতিটি নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটিতে একজন যুগ্ম জেলা জজ ও একজন সিনিয়র সহকারী জজ/সহকারী জজ নির্বাচনী তপশিল ঘোষণার দিন থেকে নির্বাচনী ফলাফলের সরকার গেজেট প্রকাশের তারিখ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। এ ক্ষেত্রে মোট ২৮০ জন বিচারক প্রয়োজন। এ ছাড়া নির্বাচনে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২-এ বর্ণিত নির্বাচনী অপরাধের সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে বিচারের জন্য ৬৪৮ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্টেটকে ভোট গ্রহণের আগের দুই দিন, ভোট গ্রহণের দিন ও ভোট গ্রহণের পরের দুই দিন অর্থাৎ মোট পাঁচ দিনের জন্য নিয়োগের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়েছে।

পাশাপাশি দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির সদস্যরা এবং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদেরকে তাদের ওপর অর্পিত নির্বাচনী দায়িত্ব যথাযথ পালনে সহায়তা এবং মনিটর করার উদ্দেশ্যে তাদের নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তা অর্থাৎ জেলা জজ, মহানগর দায়রা জজ এবং চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট/চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়ার জন্য ব্রিফিং সেশন আয়োজনের কথাও তুলে ধরা হয় বৈঠকে। এ ছাড়া নির্বাচনে প্রার্থিতা গ্রহণ বা বাতিলের বিষয়ে দায়েরকৃত মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করার বিষয়টি তুলে ধরা হয়। ইসির পক্ষ থেকে বলা হয়, ভোট গ্রহণের তারিখের কিছু দিন আগে উচ্চ আদালত থেকে প্রার্থিতা সংক্রান্ত আদেশ প্রদান করা হলে ওইসব আদেশ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ব্যালট পেপার ও বিভিন্ন প্রকার কর্ম ছাপানো, নির্বাচনী মালপত্র প্রস্তুতসহ নানাবিধ জটিলতা সৃষ্টি হয়।

এ ছাড়া সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১২৫ (গ) অনুযায়ী নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পর নির্বাচনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে নোটিশ ও যুক্তিসংগত শুনানির সুযোগ প্রদান না করে অন্তর্বর্তী বা কোনোরূপ আদেশ প্রদান না করার বিধান রয়েছে। ফলে এ ধরনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের আইনজীবীদের নোটিশ ও যুক্তিসংগত শুনানির সুযোগ চাওয়া হয়েছে প্রধান বিচারপতির কাছে।‘মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা’: এর আগে গতকাল বুধবার সকালে আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু, সুন্দর ও শান্তিপূর্ণভাবে আয়োজনের জন্য প্রশাসনের কর্মকর্তাদের যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দিয়েছে ইসি। ভোটে কার কী দায়িত্ব, তা নির্ধারণ করে দিয়ে সেটি যথাযথ পালনের নির্দেশনা দেওয়া হয়।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে ইসির সভাকক্ষে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর (সিআইবি) নির্বাহী পরিচালক, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রতিনিধি ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের (সমন্বয় ও সংস্কার) সচিব এবং বিভিন্ন বিভাগের প্রধানসহ ২৯ জন কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করেন।বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব মো. জাহাংগীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয় ছিল আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু করা। বৈঠকে স্বরাষ্ট্র, অর্থ, তথ্য, শিক্ষা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, নৌ পরিবহন, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ, মাধ্যমিক শিক্ষা, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা, যাতায়াত, গণমাধ্যম, প্রচারণা, পররাষ্ট্র, পর্যবেক্ষক, বিদেশি পর্যবেক্ষক, ঋণখেলাপিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। যার যেটুকু করণীয় সেই বিষয়টুকু স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। যাতে করে নির্বাচনের সময় কোথাও কোনো সমস্যার সৃষ্টি না হয়। এগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। কমিশন তাদের বক্তব্যও ধৈর্য সহকারে শুনেছে। নির্বাচন কমিশন যে সহায়তা প্রত্যাশা করেন, তারা তাদের সেই সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন।উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ২৯ জানুয়ারি একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন বসেছিল। সে হিসাবে আগামী ২৮ জানুয়ারি চলতি সংসদের মেয়াদ শেষ হবে।

সাংবিধানিক বিধান মতে, সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার সাপেক্ষে পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই হিসাবে ৩১ অক্টোবর থেকে ২৮ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম জানিয়েছেন, নভেম্বরের প্রথমার্ধে সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করা হবে। আর ডিসেম্বরের শেষ থেকে জানুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।