আন্তর্জাতিক

শেষের দিকে খাবার-চিকিৎসা সামগ্রী নেই পানি-বিদ্যুৎ

শনিবার ভোর থেকে ইসরায়েলে অতর্কিত রকেট হামলা শুরু করে ফিলিস্তিনের গাজাভিত্তিক সশস্ত্র সংগঠন হামাস। হামাসের হামলার জবাবে গাজায় প্রতিশোধমূলক বিমান ও কামান হামলা শুরু করে ইসরায়েল।ইসরায়েলের অব্যাহত বিমান ও কামান হামলায় মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা। মুহুর্মুহু হামলায় কেঁপে উঠছে পুরো গাজা। ধসে পড়ছে একের পর এক স্থাপনা।

হামলা ছাড়াও গাজা অঞ্চলে সম্পূর্ণ অবরোধ দিয়েছে ইসরায়েল। পানি থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ, খাবার, এমনকি চিকিৎসা সামগ্রীও ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। এতে করে অবরুদ্ধ অঞ্চলটিতে দেখা দিয়েছে চরম মানবিক সংকট।টানা পাঁচ দিন ধরে চলমান ইসরায়েলি বিমান হামলা এবং অবরোধের কারণে গাজাতে দেখা দিয়েছে খাবারের চরম সংকট। অনেক জায়গায় নেই বিদ্যুৎ। দ্রুত ফুরিয়ে আসছে জ্বালানি, এতে করে কতসময় বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে তা নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা।

এ ছাড়া সুপেয় পানির সংকটে ভুগছেন যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজাবাসী। দেখা দিয়েছে হাহাকার অবস্থা। অনেকে জীবন বাঁচাতে পরিবার নিয়ে নিরাপদ জায়গায় পালিয়েছেন। অনেকে আশ্রয়শিবিরে উঠেছেন। কিন্তু অবিরত হামলা হচ্ছে সেখানেও।পরিবারের সঙ্গে গাজার আল-রিমাল এলাকায় থাকে ১৩ বছর বয়সী নাদিনে আবদুল লতিফ। নাদিনে জানান, ‘বিমান হামলা শুরুর পর থেকে প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজন নিরাপদ জায়গায় যেতে বলছেন।

এর মধ্যেই গত সোমবার ইসরায়েল জানায়, আমাদের এলাকায় হামলা চালানো হবে।এরপরও আমরা কোথাও যাইনি। কারণ, আমাদের যাওয়ার মতো নিরাপদ কোনো জায়গা নেই।ইসরায়েলে কাজ করতেন নাদিনের বাবা। কিন্তু শনিবার থেকে ইসরায়েলের সঙ্গে হামাসের সংঘাতে পর থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না তার বাবাকে। এখন পর্যন্ত পরিবারের সদস্যদের কোনো যোগাযোগ হয়নি তার বাবার।

এমন পরিস্থিতি চরম মানিবিক সংকটে পড়েছে নাদিনে ও তাঁর পরিবার। নাদিনে জানায়, ‘সোমবার থেকে পানির সংযোগ নেই। বিদ্যুৎ আর ইন্টারনেট খুব কম পাচ্ছি। খাবার কেনার জন্য বাড়ি থেকে বের হওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি দিন দিন চরম বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। যুদ্ধবিমানের শব্দ পেলে আমরা ঘরের ভেতর টেবিলের নিচে লুকিয়ে থাকছি।

ইউনাইটেড নেশনস রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সি ফর প্যালেস্টাইন রিফিউজিস (UNRWA) জানিয়েছে যে, তারা গাজায় তাদের ৮৩টি স্কুলকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে পরিণত করেছে কিন্তু সোমবার পর্যন্ত ৯০ শতাংশ পূর্ণ কয়ে গিয়েছিলো। বর্তমানে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে আড়াই লাখেরও বেশি মানুষ রয়েছে।পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি : গাজা পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ স্থানগুলির মধ্যে একটি, যেখানে প্রায় ২৩ লাখ মানুষ ১৪০ বর্গ মাইল এলাকায় বাস করে। জাতিসংঘের হিসেবে এই অঞ্চলের অর্ধেকেরও বেশি বাসিন্দা খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এবং দারিদ্র্যসীমার নীচে বাস করে।

গাজার বেশিরভাগ বিদ্যুৎ, পানি, জ্বালানি এবং এর কিছু খাদ্য সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে ইসরায়েল। ইসরায়েলের বেঁধে দেওয়া সময়ে, নির্ধারিত করিডর হয়ে গাজায় খাবার-পানি ঢোকে। হামাসের হামলার জবাবে গাজার ওপর কড়া অবরোধ আরোপ করেছে ইসরায়েল। ভূমি, সাগর ও আকাশপথে গাজায় পণ্য প্রবেশ করা দুরূহ। তবে কিছু ক্ষেত্রে মানবিক সহায়তা ও বাণিজ্যের জন্য দুটি সীমান্ত ক্রসিং উন্মুক্ত রেখেছে ইসরায়েল।

এ পরিস্থিতিতে গত সোমবার জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সতর্ক করে বলেছেন, ‘হামাসের হামলার আগে থেকেই গাজার মানবিক পরিস্থিতি ভয়ংকর ছিল। এখন এ পরিস্থিতি আরও দ্রুত খারাপের দিকে যাবে।বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি গত রোববার জানিয়েছে, তাদের কাছে গাজাবাসীর জন্য এক মাসের খাবার মজুত আছে। পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, দ্রুত খাবারের জোগান দিতে না পারলে চরম সংকটে পড়বে গাজার মানুষ। এ ছাড়া গাজায় এখন বিদ্যুতের সংকট চরম। এ অবস্থায় খাবার নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিও দেখছে সংস্থাটি।

আরও খবর

Sponsered content

%d bloggers like this: