বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

এবার প্রতারণার ভয়াবহ ফাঁদ ডেটিং অ্যাপ

এবার প্রতারণার ভয়াবহ ফাঁদ ডেটিং অ্যাপ

প্রতারণার ভয়াবহ ফাঁদে পরিণত হয়েছে ‌‘ডেটিং অ্যাপ’। অন্যের ছবি ব্যবহার করে খোলা হচ্ছে অ্যাকাউন্ট। পরে এসব ফেইক প্রোফাইলিংয়ের মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। শুধু তাই নয়, এর মাধ্যমে পরিচয়ের পর অপহরণের মাধ্যমেও হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে অর্থ। গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) এসব অ্যাপস বন্ধের জন্য চিঠি দেয়ার পরও কাজ হয়নি; বরং দিন দিন বেড়েই চলেছে অ্যাপভিত্তিক এ অপরাধ।

ঢাকার একটি বেসরকারি কলেজের এক শিক্ষার্থী কয়েক দিন ধরে খেয়াল করেন, বাসা থেকে বের হলেই আশপাশের কিছু মানুষ তার দিকে কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন। রিকশায় যাওয়ার সময় অপরিচিত ব্যক্তিরা তার নাম ধরে ডাকেন। কেউ আবার রিকশার গতিরোধ করে তার কাছে কারণ জানতে চান, কেন তিনি ডেটিং করার কথা বলে অগ্রিম টাকা নিয়ে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন।

এমন পরিস্থিতির শিকার হন তিনি রেস্তোরাঁয় খেতে গিয়ে, কেনাকাটা করতে শপিংমলে গিয়ে! এরই মধ্যে তার পরিচিতরা তাকে ট্যানট্যান নামে একটি ডেটিং অ্যাপের স্ক্রিনশট পাঠাতে থাকেন। সেখানে একটি অ্যাকাউন্টে তার ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। ভুক্তভোগী ওই তরুণীর দাবি, তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন এ কাজ করেছেন তারই এক বান্ধবী। ডেটিংয়ের কথা বলে ২০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০ হাজার টাকা, আবার কারও কারও কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ টাকাও। ভুয়া জন্মদিনের কথা বলে নিয়েছেন দামি উপহার।

এ বিষয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন ভুক্তভোগী ওই তরুণী শিক্ষার্থী। পুলিশ বলছে, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছেন তারা।ঢাকা মহানগর পুলিশের (উত্তরা বিভাগ) উপ-পুলিশ কমিশনার মো. শাহজাহান বলেন, বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি। সাইবার ক্রাইমের মাধ্যমে তদন্ত করে দেখবো, যার নামে অভিযোগ করা হয়েছে, সে এ বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কি-না।

২০২১ সালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় হওয়া একটি মামলা তদন্ত করতে গিয়ে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম জানতে পারে ডেটিং অ্যাপের মাধ্যমে পরিচয়ের সূত্র ধরে একটি চক্র ধনাঢ্য ব্যক্তিদের অপহরণ করছে। পরে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। গ্রেফতার করা হয়েছিল তিনজনকে। তখন অন্তত বিশটি ডেটিং অ্যাপের তথ্য আসে গোয়েন্দাদের কাছে। এসব অ্যাপ বন্ধে বিটিআরসিকে চিঠিও দিয়েছিল পুলিশ। বন্ধ হয়নি একটিও।

ডিএমপির গোয়েন্দা শাখার (সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ) উপ-পুলিশ কমিশনার তারেক আহমেদ বলেন, অ্যাপগুলো মনিটরিংয়ের বিষয়ে বিটিআরসিকে লিখিতভাবে বলা হয়। এগুলো যেহেতু সমস্যা, তাই প্রয়োজনে বন্ধ করে দেয়ার ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়। ২০২২ সালে এরকম অ্যাপস ১৮ থেকে ২০টার মতো পেয়েছিলাম। এখন হয়ত আরো বেড়েছে।

এ মুহূর্তে প্লে স্টোরে আছে প্রায় অর্ধশত অ্যাপ। প্রতিনিয়ত যোগ হচ্ছে নতুন নতুন ডেটিং অ্যাপ। এসব অ্যাপ যতটা না জীবনসঙ্গী খোঁজার, তার চেয়ে বেশি পাতা প্রেমের ফাঁদ। এ ফাঁদে পা দিয়ে নিঃস্ব হওয়ার ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। আর সম্প্রতি ফেইক প্রোফাইলিংয়ের ঘটনা বাড়ছে, যা উদ্বেগজনক বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন,

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেয়ে ব্যক্তি সতর্কতা জরুরি। অর্থাৎ, ব্যক্তি তার নিজস্ব অবস্থান অথবা তার পেশাগত মর্যাদার জায়গা থেকে যে কারও সঙ্গে অল্পতেই বন্ধুত্ব তৈরি কিংবা সেই বন্ধুত্ব থেকে অন্তরঙ্গ হওয়ার জন্য আগ্রহ তৈরি করবে না। এখানে অনৈতিকতার প্রশ্নও আছে।

তাই এ বিষয়গুলোতে সতর্ক থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বন্ধুত্ব তৈরি বিষয়গুলোতে চিন্তাভাবনা করে অগ্রসর হতে হবে। এতে করে প্রতারিত হওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হবে না। সাইবার জগতের এসব ফাঁদ থেকে বাঁচতে সতকর্তার বিকল্প নেই বলছেন সংশ্লিষ্টরা।