16 May 2024 , 8:33:15 প্রিন্ট সংস্করণ
ইসলামের ইতিহাসে হযরত মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) এর মদিনায় হিজরতের ঘটনা একটি অনন্য ঐতিহাসিক ঘটনা হিসেবেই খ্যাত। তাই হারাম শরীফ থেকে প্রায় তিন মাইল দক্ষিণপূর্ব কোণে অবস্থিত হযরত (সা.)-এর হিজরতের রাতে আশ্রয় গ্রহণের স্থান গারে সাওর বা সাওর পাহাড়ের গুহা হিজরতের কারণেই ইতিহাসে সমভাবে প্রসিদ্ধি লাভ করে।
হযরতের সহযাত্রী একান্ত বন্ধু হযরত আবুবকর সিদ্দীক (রা.)সহ সওর নামক গুহায় আশ্রয় নিলেন। গুহাটি পরিত্যক্ত হওয়ার কারণে তাতে অনেকগুলো ছিদ্র ছিল। হযরত আবুবকর (রা.) একে একে সবগুলো ছিদ্রই কাপড় ছিঁড়ে ছিঁড়ে বন্ধ করে দিলেন। যাতে করে কোন সাপ-বিচ্ছু যেন হযরত সা. কে কোন রকম কষ্ট দিতে না পারে।
কিন্তু একটি ছিদ্র রয়ে যায়, বন্ধ করতে পারলেন না কাপড়ের অভাবে। ছেঁড়ার এত কোন কাপড়-চোপড় না থাকায় হযরত আবুবকর (রা.) নিজের পা মোবারক দিয়েই ঐ ছিদ্রটি ঠেকিয়ে রাখলেন। আর প্রাণের চেয়েও প্রিয় বন্ধু সরদারে দোজাহান হযরত মুহাম্মাদ (সা.) কে নিজের ঊরুর ওপর মাথা মোবারক রেখে শুইয়ে দিলেন।যেহেতু রাতের অন্ধকারে এত দূর পথ অতিক্রম করে এসেছেন, তাই স্বাভাবিকভাবেই ক্লান্তি এবং শ্রান্তি হযরত (সা.) কে পেয়ে বসে। ফলে হযরত ঘুমিয়ে পড়েন।
এদিকে হযরত আবুবকর (রা.) অতন্দ্র প্রহরীর মতো হযরতকে বহন করে পাহারা দিয়ে বসে আছেন। কিন্তু হযরত আবুবকর (রা.)-এর পা দিয়ে বন্ধ রাখা গর্তে ছিল একটি বিষাক্ত সাপ, গর্তের মুখ বন্ধ দেখে সে বার বার দংশন করতে থাকে।এদিকে হযরত আবুবকরের চেহারা মোবারক বিষাক্ত সাপের ছোবলের কারণে ফ্যাকাশে হয়ে কালো আকার ধারণ করে। তবুও প্রাণ প্রিয় নবীর প্রেমে আসক্ত আবুবকর (রা.) তার পাকে গর্তের মুখ থেকে সরিয়ে নিতে পারলেন না।
শেষ পর্যন্ত অসহনীয় বিষক্রিয়ায় তাঁর চোখ থেকে দু’ফোঁটা অশ্রুজল হযরতের চেহারা মোবারকে পড়ে যায়।ফলে হযরত (সা.) জেগে যান এবং জিজ্ঞেস করেন, আবুবকর কি ব্যাপার কাঁদছো কেন? তোমার চোখে পানি কেন? হযরত আবুবকর (রা.) সব খুলে বললেন, হযরত সা. তাঁর পবিত্র থুথু মোবারক আবুবকরের পায়ের ঐ দংশিত স্থান লাগিয়ে দিলে সঙ্গে সঙ্গে বিষ নেমে যায়।
দেখুন কি নবীপ্রেম, ইসলামী জগতের সর্ব প্রথম দরবেশ বা ফকির হযরতের একনিষ্ঠ বন্ধু ও সাথী হযরত আবুবকর (রা.)-এর এই নবীপ্রেম থেকে আমাদের শিক্ষা নেয়া উচিত।এ ধরনের হাজারো ঘটনা সাহাবায়ে কেরাম ও ফকির দরবেশদের নবী প্রেমের ঘটনা। ইসলামের ইতিহাসে সমৃদ্ধ হয়ে আছে।
জুমার দ্বিতীয় আজান চালু হলো যেভাবে
হুজুর (সা.) কে একবার হযরত ওমর (রা.) বললেন, হুজুর! আমি পৃথিবীর যাবতীয় বস্তু থেকে আপনাকে বেশি ভালোবাসি, তবে শুধু নিজের জান থেকে এখনো বেশি ভালোবাসতে পারিনি, হুজুর সা. বললেন, এখনো তোমার ঈমানের পরিপক্বতা আসেনি। কিছুক্ষণ পর আবার বললেন, হুজুর! আমার জান থেকেও আপনাকে বেশী ভালোবাসি।
হুজুর সা. তখন এরশাদ করলেন, এখন তোমার ঈমানে পরিপক্বতা আসলো।একজন মানুষ তখনই কামেল মোমেন হিসেবে গণ্য হবেন, যখন পৃথিবীর যাবতীয় বস্তু এমনকি পরিবার পরিজন ও নিজের জান থেকেও প্রিয় নবী সা. কে বেশি ভালোবাসতে পারবেন।ইসলামের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ফকির বা দরবেশ হযরতে সাহাবায়ে কেরাম রা. হুজুর সা. কে তাদের মা-বাবা, এমনকি স্ত্রী-পুত্র ও নিজের জান থেকেও বেশি ভালোবাসতেন।
এ ব্যাপারে যিনি যতখানি বেশি ভালোবাসতে পারবেন তিনি ততো বেশি ওলি দরবেশ হিসেবে আল্লাহর কাছে পরিগণিত হবেন।কেয়ামত পর্যন্ত আগত কোন মানুষই অলিয়ে কামেল বা খাঁটি ফকির দরবেশ হতে পারবে না, যতক্ষণ না হুজুর সা. কে সব জিনিসের ওপর প্রাধান্য দেবে। আর এই নবীপ্রেম শুধু মুখের শ্লোগান কিংবা কাগজে আর দেয়ালের গায়ে “আশেকে রাসূল সা.” শব্দমালা লেখার মাধ্যমে হয় না।
এই প্রেম হচ্ছে, অন্তরের গভীরের একটি অনুরাগ ও প্রেরণা, যা মানুষকে সবকাজে নবীর আনুগত্যে অনুগত হতে বাধ্য করতে থাকে। তাই চলনে বলনে কাজে-কর্মে, লেনদেনে, অর্থাৎ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নবীর সুন্নতকে যে যতো বেশি আঁকড়ে ধরতে পারবে, তিনিই হবেন নবীপ্রেমের সত্যিকারের আশেকে রাসূল সা.।আসুন আমরা সকলেই আমাদের জীবনের সর্বক্ষেত্রে নবীয়ে পাক সা. এর সুন্নতকে সমুন্নত রাখতে সচেষ্ট হই।