5 September 2023 , 12:20:37 প্রিন্ট সংস্করণ
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদস্য ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের গত নির্বাচনে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী। এ ছাড়া তিনি দলটির আন্তর্জাতিকবিষয়ক কমিটির সদস্য। অভিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ মেয়র সাদেক হোসেন খোকার পুত্র। স্কলাস্টিকা স্কুল থেকে ও-লেভেল এবং এ-লেভেল শেষে উচ্চশিক্ষার জন্য যান ইউনিভার্সিটি অব হার্টফোর্ডশায়ারে (যুক্তরাজ্য)। সেখানে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে আন্ডারগ্র্যাজুয়েশন। তরুণ রাজনীতিক হিসেবে দেশের বর্তমান রাজনীতি, আগামী নির্বাচন, বিএনপির আন্দোলন, বিদেশিদের ভূমিকা প্রভৃতি নিয়ে কালবেলার সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এম এম মুসা।একজন তরুণ রাজনীতিক হিসেবে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে কেমন দেখছেন?
বাংলাদেশ সুস্থ রাজনীতির জায়গায় এখন আর নেই। তাই বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিও খুব একটা ভালো অবস্থায় নেই। এক-এগারোর পর থেকে আমরা এক ধরনের বিরাজনীতিকরণ প্রক্রিয়ার মধ্যে ঢুকে গেছি। দীর্ঘমেয়াদে এর ক্ষতিকর প্রভাবগুলো এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি। নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশে দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মহোৎসব চলছে। সব প্রতিষ্ঠানকে নষ্ট করে ফেলা হয়েছে।গত ১৫ বছরে আমরা একটি স্বাভাবিক নির্বাচন হতে দেখিনি। মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। ২০১৪ ও ’১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। এখন এটি ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে। গত ১৪ বছর ধরে দেশে গণতন্ত্র নেই। মাফিয়ারা এখন দেশ নিয়ন্ত্রণ করছে। রাজনীতিক হিসেবে না হলেও দেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমরা চাই সংকট থেকে উত্তরণ ঘটুক। সে চেষ্টাই আমরা করছি।
নির্বাচন কমিশন সরকারের সিদ্ধান্ত এবং নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী বছরের জানুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা করেছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন যে স্বাধীন নয়, তার প্রতিফলনই আমরা দেখতে পাচ্ছি। নির্বাচন কমিশনেরও সরকারের আজ্ঞা পালন করা ছাড়া অন্য কিছু করার নেই। কারণ তাদের হাত-পা বাঁধা। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের প্রধান স্থানীয় নির্বাচন এবং উপনির্বাচনসহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে কিছু ভূমিকা রাখার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সরকারের চাপে অতি দ্রুতই তাকে তার স্টেটমেন্ট পরিবর্তন করতে হয়েছে। সরকার যেভাবে নির্দেশনা দিচ্ছে, তারা সেই অনুযায়ী কাজ করছেন। কিন্তু দেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট সম্পূর্ণ আলাদা। বাংলাদেশে মাঠের রাজনীতি এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যে ধরনের আন্দোলন গড়ে উঠেছে, তাতে সবকিছুই সরকারের শিডিউল অনুযায়ী হবে এর কোনো বাস্তবতা নেই। আমরা অতীতেও দেখেছি, রাজনীতির মাঠে দুদিনের মধ্যে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে যায়। জনগণের ইচ্ছানুযায়ী পরিবর্তন আসবে বলে আমি মনে করি।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল একটি গণতান্ত্রিক রাজনীতির দল। আমরা যদি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে যেতে চাই, তাহলে অবশ্যই একটি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। এর বিকল্প কোনো পথ নেই। ২০১৪ ও ’১৮ সালে প্রহসনের নির্বাচন আমরা আর চাই না। সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ যাদের হাতে ক্ষমতা তুলে দেবে, তারাই রাষ্ট্র পরিচালনা করবে। অবশ্যই নির্বাচন হতে হবে এবং সেটা কোনো প্রহসনের নির্বাচন হবে না।এ বিষয়টা আলোচনা করতে গেলে অতীতের অনেক ঘটনা নিয়ে আলোচনা করতে হবে। যে ঘটনাগুলোকে কেন্দ্র করে মূলত দুই দলের মধ্যে দূরত্ব এবং বৈরিতা তৈরি হয়েছে। দিনে দিনে এই বৈরিতা বাড়তে বাড়তে এমন একটি পর্যায়ে চলে গেছে, যার ফলাফল খুবই তিক্ত। অনেক ক্ষেত্রে এটা ব্যক্তিগত শত্রুতার পর্যায়েও চলে গেছে। কিন্তু অতীতে যে ঘটনাই ঘটেছে, তার জন্য আমরা বর্তমান প্রজন্ম এবং আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম কেন ভুক্তভোগী হব? এসব ঘটনার পেছনে আমাদের কোনো ভূমিকাই ছিল না।
আমি যখন রাজনীতিতে আসি, তখন কখনোই ভাবিনি যে এরকম একটি পরিবেশে আমাকে রাজনীতি করতে হবে। আমি হয়তো ছোটবেলা থেকেই রাজনীতির ইচ্ছা পোষণ করেছি। কিন্তু যখনই রাজনীতিতে প্রবেশ করি, তখন সংকটময় রাজনৈতিক পরিবেশ দেখতে পাই। যেখানে সব রাষ্ট্রীয় যন্ত্রকে বিরোধী দল দমনে ব্যবহার করা হচ্ছে। হামলা, মামলা, গুম, খুন, রাজনৈতিক কর্মসূচিতে দিনদুপুরে গুলি—এ ধরনের সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হয়ে রাজনীতি করতে হচ্ছে। এ সংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়া। আমরা কোনোদিন ধরে নিইনি যে, আমরা দাবি করব আর আওয়ামী লীগ সেটা মেনে নেবে। আমরা এমনটা ভাবছিও না। আমরা আমাদের আন্দোলনে অটল রয়েছি এবং অবশ্যই জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। আমরা জানি আওয়ামী লীগ নির্বাচন করার চেষ্টা করবে। তারা নির্বাচন করে ফেলার জন্য সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করবে, সেটাও আমরা জানি। তারা আমাদের ওপর গুম, খুন, হামলা, মামলা, জেল-জুলুম, অত্যাচার চালাবে—সেটাও আমরা জানি। আমরা আমাদের জীবনকে বাজি রেখেই আন্দোলনে নেমেছি।
পাতানো নির্বাচন বৈধতা দেওয়ার জন্য বিএনপির নির্বাচনে যাওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এবং এই সংসদ বহাল থাকা অবস্থায় আমরা কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব না—এটা আমাদের ফাইনাল অবজারভেশন, যেটা আমি দলীয় চেয়ারম্যান থেকে পেয়েছি।এটা একেবারেই ভ্রান্ত কথা। আমাদের আন্দোলন আজকের জায়গায় পৌঁছেছে শুধু জনগণের জন্য। আমাদের বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে লাখ লাখ মানুষের সমাগম ঘটেছে। একটা রাজনৈতিক দলের কর্মীসংখ্যা কখনো এত হতে পারে না। আমাদের আন্দোলনে ব্যাপক জনসম্পৃক্ততা রয়েছে। বিভাগীয় সমাবেশগুলোর আগে আমরা ঢাকার বিভিন্ন জোনে সমাবেশ করেছি। সেখানেও ব্যাপক জনসমাগম ঘটেছে। আমরা নিজেরাও আশা করিনি আমাদের সমাবেশগুলোতে এত জনসমাগম ঘটবে।আওয়ামী লীগই এখন শুধু কর্মীনির্ভর, তাও ভাড়াটে কর্মী। ভাড়াটে কর্মী নিয়েই তাদের সমাবেশগুলো চলছে। দেয়াল টপকে কীভাবে তাদের সমাবেশ থেকে লোকজন পালিয়ে যাচ্ছে, সেটা অতীতে আপনারা দেখেছেন। বিভিন্ন মিল, কলকারখানাগুলোতে চিঠি লিখে সেগুলো বন্ধ রেখে কর্মীদের বাধ্য করা হয়েছে তাদের জনসমাবেশ বা প্রোগ্রামগুলোতে আসার জন্য। আওয়ামী লীগ নিজেদের দুর্বলতা ঢাকার জন্য বলছে, বিএনপির সমাবেশে জনসম্পৃক্ততা নেই।
বিএনপি একটি আদর্শ সামনে রেখে গড়ে উঠেছে। সেই আদর্শ হলো জিয়াউর রহমানের বহুদলীয় গণতন্ত্র। সেই আদর্শ হলো বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ। জনগণ বারবার নির্বাচিত করে বিএনপিকে ক্ষমতায় এনেছে। জনগণের আস্থা নিয়ে একটি দল কখনো ভেঙে যায় না। বিএনএম, বিএনএফ নামের দু-একটি দলকে নিবন্ধন দিয়ে বিএনপিকে ভাঙা যাবে না। এটি আওয়ামী লীগের দেউলিয়াত্বের প্রকাশ। এগুলোর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ হাস্যরস সৃষ্টি করছে। যে দলগুলোকে বিএনপি নামের কাছাকাছি নামে নিবন্ধন দিয়ে এবং বিএনপির প্রতীকের কাছাকাছি প্রতীক দিয়ে সামনে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে, সেগুলো কীভাবে তৈরি হয়েছে আমরা তা জানি।আমাদের দল একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। সেখানে আমাদের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী স্ট্যান্ডিং কমিটি রয়েছে। আমাদের ভাইস চেয়ারম্যান এবং চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিল রয়েছে। আমাদের এক্সিকিউটিভ কমিটি রয়েছে। একটি রাজনৈতিক দলের সিদ্ধান্তগুলো যেভাবে আসার কথা সেভাবে সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী কমিটি থেকে শুরু করে পরবর্তী ধাপের সব পর্যায়ের আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। আমি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির একজন সিনিয়র সদস্য হিসেবে কাজ করছি। ফলে এ প্রসেসগুলোর সঙ্গে আমিও কিছুটা জড়িত। বিএনপির ঢাকাকেন্দ্রিক কর্মসূচিগুলোও আমরা আহ্বায়ক এবং যুগ্ন আহ্বায়কদের আলোচনার মাধ্যমে নেওয়া হয়। আর এসব কিছুর সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
আমরা জনগণের জন্য রাজনীতি করি। জনগণের কষ্ট হয়, আমাদের কর্মসূচির কারণে জনগণের আর্থিক অথবা দৈনন্দিন জীবনে কোনো ধরনের বিঘ্ন সৃষ্টি হয়, সেই কর্মসূচি আমরা দিতে চাই না। ভাঙচুর কোনো কর্মসূচির মধ্যে পড়ে না। হরতাল একটি রাজনৈতিক কর্মসূচির অংশ। বর্তমান সরকারের অধীনে অর্থনীতির অবস্থা খুবই খারাপ। মূল্যস্ফীতির কারণে নিত্যপণ্য ও অন্যান্য দ্রব্যমূল্য অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে যদি আবার হরতালের মতো কোনো কর্মসূচি আসে তাহলে সেই পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে নিয়ে যেতে পারে। সবকিছু চিন্তা করে আমরা সে ধরনের কর্মসূচিতে যেতে চাইছি না। আমরা কোন পর্যায়ে হার্ডলাইনের কর্মসূচিতে যাব এবং কখন সেটা বাস্তবায়ন করব, সেটা সময়ই নির্ধারণ করে দেবে।আমাদের আন্দোলনের সঙ্গে সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপের সরাসরি সম্পৃক্ততা নেই। আমরা লবিস্ট নিয়োগ করেছি বলে যে ধরনের দাবি আওয়ামী লীগ করে থাকে, সেটা হাস্যকর। বাংলাদেশে যে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটেছে, সেগুলোর প্রমাণাদি রয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সেসব তথ্য যাচাই-বাছাই করেছে এবং সেটার প্রমাণ পেয়ে বাংলাদেশের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হয়েছে এবং ব্যবস্থা নিচ্ছে।এসবের সঙ্গে আমাদের আন্দোলনকে মেলানোর একটি বড় পয়েন্ট হলো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। আমাদের আন্দোলনের একটি বড় এজেন্ডাই হলো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে অবস্থান। তবে আন্তর্জাতিক মহলের স্যাংশন ও পদক্ষেপের সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তারা যদি বিএনপির কথায় স্যাংশন আরোপ করত তাহলে ২০১০ সালেই সেই প্রক্রিয়া শুরু হতো। ২০১০ সালে চৌধুরী আলম হত্যাসহ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড শুরু হয়। আমরা সে সময়ই তাদের কাছে স্যাংশন আরোপ করার অনুরোধ করতে পারতাম।
বিএনপি কোনো বিদেশি শক্তির ওপর নির্ভর করে আন্দোলন করে না। আমরা জনগণের শক্তির ওপর নির্ভর করে আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা আমাদের আন্দোলন করে যাচ্ছি এবং বহির্বিশ্বে যারা রয়েছেন, তারা তাদের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার রক্ষা করার জন্য তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করছেন।প্রবীণরা যদি আমাদের জায়গা তৈরি করে না দিতেন তাহলে আজ আমি এখানে বসে কথা বলতে পারতাম না। তারা জায়গা করে না দিলে আজ আমি এবং আমার মতো তরুণরা রাজনীতি করতে পারত না। আমাদের গড়ে তোলার জন্য প্রবীণদের পজিটিভ দিকনির্দেশনা রয়েছে। আগামী দিনে বাংলাদেশের এবং বিএনপি রাজনীতিতে তরুণদের ভূমিকা রাখার জন্য যে প্রেক্ষাপট তৈরি করা দরকার, সেটি প্রবীণরা তৈরি করে দিচ্ছেন।বিএনপি তরুণদের ওপর নির্ভরশীল। আমি যখন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থী হলাম, তখন আমার বয়স মাত্র ৩৩ বছর। এরকম একটি জায়গায় আমাকে শুধু প্রার্থিতা দেওয়ার জন্য প্রার্থী করা হয়নি। প্রার্থী করা হয়েছে একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে। এখানে একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে আমাকে দলের জন্য এবং দেশের জন্য কাজ করতে হবে। বিএনপি নবীন ও তরুণদের রাজনীতিতে আসার সুযোগ করে দিচ্ছে।
তাহলে কি আমরা গত ১৫ বছর ধরে যে অনির্বাচিত সরকার দেশ চালাচ্ছে তার বিরুদ্ধে কথা বলব না? আমরা একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তিন মাসের জন্য একটি অস্থায়ী সরকার ব্যবস্থা চাচ্ছি, সেটা যদি গণতন্ত্রের জন্য সাংঘর্ষিক হয় তাহলে ১৫ বছর ধরে যারা অনির্বাচিতভাবে ক্ষমতা দখল করে আছে, তারা কোন গণতন্ত্রের চর্চা করছে? যারা আওয়ামী লীগের ক্ষমতা দখলকে সাপোর্ট করতে চায়, তারা নানাভাবে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে সেটাকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করছে। আওয়ামী লীগ নিজেও ’৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করেছিল। সে সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তনও করা হয়েছিল। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই একমাত্র উপায় গণতন্ত্রকে রক্ষা করার। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক দলগুলোর একে অন্যের ওপর আস্থা এবং বিশ্বাস বিবেচনা করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারই একমাত্র ব্যবস্থা, যে ব্যবস্থার মাধ্যমে গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখা সম্ভব।
তিন মাসের জন্যও একটি নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকার আসলে তারা খুব সহজেই সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে। কারণ বাংলাদেশের প্রশাসনিক কাঠামো এমন যেখানে ওপর থেকে কোনো নির্দেশ গেলে সেটা সবাই মানতে বাধ্য। আওয়ামী লীগ যতভাবেই সিস্টেমটাকে সাজাক না কেন, একটি নিরপেক্ষ সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর মাত্র সাত দিনেই সেই প্রশাসন জনমুখী হতে বাধ্য। বিষয়টা এমন নয় যে, দেশের সম্পূর্ণ প্রশাসন পরিবর্তন করে ফেলা হবে। বরং যে প্রশাসন রয়েছে সে প্রশাসনই থাকবে এবং তাদের মাধ্যমেই নির্বাচন করতে হবে। কিন্তু একটি নির্দলীয় সরকারের অধীনে তাদের ভূমিকাটা হবে নিরপেক্ষ।আমরা এই মুহূর্তে যুগপৎ আন্দোলনে রয়েছি, এখন কোনো জোটবদ্ধ আন্দোলন করছি না। জোটের বিষয়টি আসলে নির্বাচনকেন্দ্রিক একটি বিষয় চলে আসে। বিএনপি সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি এবং বিএনপির রাজনৈতিক চর্চাকে পরিবর্তন করার জন্য এককভাবে আন্দোলন সংগ্রাম করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশের প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল হলো বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। সর্বোচ্চসংখ্যক সম্মুখসমরের মুক্তিযোদ্ধাদের দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। আমাদের রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ, আমাদের রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের শক্তি। এর সঙ্গে আমাদের রয়েছে গণতন্ত্রের শক্তি। যারা গণতন্ত্র ফেরত চায়, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়, ভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নির্ধারণ করতে চায়, তাদের সবার সঙ্গে আমরা যুগপৎভাবে আন্দোলন করছি এবং যুগপৎ কর্মসূচি পালন করে আসছি।
জামায়াতকে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো বিষয় এখানে নেই। জামায়াতের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘ সময়ের অ্যালায়েন্স ছিল। হতে পারে কোনো কৌশলগত কারণে জামায়াত নিজেই নিজস্ব সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির জন্য এককভাবে কাজ করতে চাইছে। তারা এটা চাইতেই পারে, বিএনপির মতো বড় দলের সঙ্গে সরাসরি জোটে না গিয়ে নিজেদের মতো করে তারা কর্মসূচি প্রণয়ন করবে এবং শক্তি বৃদ্ধি করবে। এখনই আমরা তাদের সঙ্গে সরাসরি কোনো জোট বা অ্যালায়েন্সে না যাওয়ার এটা একটা কারণ হতে পারে।আমি আগেও সহাবস্থানের কথা বলেছি। এখনো বলছি, একটি সহাবস্থানের জায়গায় আসতে হবে। কিন্তু আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ে সেই মাইন্ডসেট নেই। ঐতিহাসিকভাবেই তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। তারা বাকশাল কায়েম করেছিল, তারা একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করেছে এবং তারা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার জন্য আবারও সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী করেছে। তখন থেকেই আমরা স্পষ্টভাবে বলে আসছি, নির্বাচনে কারচুপি করার একটি দুরভিসন্ধিমূলক পরিকল্পনা থেকেই তারা সংবিধান সংশোধন করেছে। তাদের আগে এই মাইন্ডসেট থেকে বের হয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিশ্বাস করতে হবে।
আমার প্রশ্ন হলো, আওয়ামী লীগের নতুন প্রজন্ম কি রাজনীতি করবে না? তারা কি থাকবে না দেশে? আওয়ামী লীগের সমর্থক বা কর্মীরা কি থাকবে না এ দেশে? আমরা কি তাদের বের করে দেব এ দেশ থেকে? আমরা এমনটা করতে পারি না। সবাই আমরা বাংলাদেশের নাগরিক। বাংলাদেশের স্বার্থে ঐকমত্যের একটি মনোভাব থাকতে হবে। বাংলাদেশের জন্য কোনটা ভালো সেটাই সবার আগে চাইতে হবে। বাংলাদেশকে সবার আগে প্রাধান্য দিতে হবে এবং গণতান্ত্রিক মনোভাব তৈরি করতে হবে। তাহলেই এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটবে।
সূএঃ কালবেলা